কৃষ্ণ কল্যাণী সহ চার বিধায়ককে প্রকাশ্যে আয়কর হানার হুমকি! শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ
Connect with us

রাজনীতি

কৃষ্ণ কল্যাণী সহ চার বিধায়ককে প্রকাশ্যে আয়কর হানার হুমকি! শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ

Rate this post

রিমিক মাঝি, কোলকাতা : বিধানসভায় রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী সহ চার বিধায়ককে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল বিধানসভা সহ রাজ্য রাজনীতি। বুধবার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ চলাকালীন ঘটনার সূত্রপাত। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হওয়ার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা হই-হট্টগোল শুরু করেন। এর পরই তাঁরা ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যান।

কিন্তু বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া চার বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ,বিশ্বজিৎ দাস, সৌমেন রায় ও তন্ময় ঘোষ নিজেদের আসনে বসে ছিলেন। ওই চার বিধায়কের অভিযোগ, ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কত সাহস দেখে নেব। কালকেই তোমাদের বাড়িতে আয়করকে লাগিয়ে দেব। বুঝবে ঠেলা’। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হলে রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী সহ চার বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনের কাছে গিয়ে তাঁকে গোটা বিষয়টি জানান। এরপরই পার্থ চট্টোপাধ্যায় উঠে দাঁড়িয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগটি শোনার জন্য অনুরোধ করেন। তারপরই স্পিকারের কাছে শুভেন্দু অধিকারীর হুমকি দেওয়ার গোটা বিষয়টি জানান রায়গঞ্জের বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুভেন্দু অধিকারী আমাকে বলেছেন– কত সাহস দেখে নেব। কালকেই তোমর ওখানে আয়করকে পাঠাবো। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি বসে ছিলাম। আমরা নতুন জিতে এসেছি। বিধানসভার কাজকর্ম শিখতে চাই।’ কৃষ্ণ কল্যাণীর মুখ থেকে এই অভিযোগ শোনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ আনার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহলে শুভেন্দু অধিকারী বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ আনা উচিত। তাহলে ভেবে দেখুন, সিবিআই, ইডি, আয়কর কারা নিয়ন্ত্রণ করে!’ তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য কৃষ্ণ কল্যাণী সহ চার বিধায়ককে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অধিবেশন শেষে কৃষ্ণ কল্যাণী সহ এই চার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানান। বিধানসভা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন স্পিকার।

যদিও ওই চার বিধায়ককে আয়কর হানার হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা বলেছেন, ‘আমি কোথায় বলেছি? আমি বলেছি এমন কি কোনও রেকর্ড আছে?’ যদিও বুধবার বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকেই এই চার বিধায়কের সঙ্গে বিজেপি বিধায়কদের গন্ডগোল শুরু হয়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতলেও কৃষ্ণ কল্যাণী, সৌমেন রায়, বিশ্বজিৎ দাস এবং তন্ময় ঘোষ পরবর্তীকালে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু বিধানসভায় খাতায়-কলমে তাঁরা এখনও বিজেপির বিধায়ক। বুধবার যখন শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় ভাষণ রাখতে ওঠেন, এই চার বিধায়ক বিজেপির দিকের আসনেই বসেছিলেন এবং সেখান থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের বিরুদ্ধাচারণ করছিলেন। বিজেপির অন্যান্য বিধায়করা তখন বিরক্ত হয়ে এই চার বিধায়ককে বার বার ইঙ্গিত করতে থাকেন, তৃণমূলের দিকে গিয়ে বসার জন্য। এই নিয়ে বিধানসভার ভিতরেই ওই চার বিধায়কের সঙ্গে বিজেপির বাকি বিধায়করা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হওয়ার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কৃষ্ণ কল্যাণীদের উদ্দেশ্যে আয়কর হানার হুমকি দেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু অধিকারী আয়কর হানার হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ওই চার বিধায়ক নিজেদের দাবিতে অনড়।

Advertisement

পরে সৌমেন রায়, তন্ময় ঘোষ এবং বিশ্বজিৎ দাসকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা সবসময় সদনকে ষড়যন্ত্র করে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেন। এর আগেও ঠিক একইভাবে আমাদের রাজ্যপালের ভাষণ শুনতে দেওয়া হয়নি। আজকেও তেমনই একটি ষড়যন্ত্র ছিল যে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ উনি চলতে দেবেন না। সেই জায়গায় আমরা চারজন প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা এখানে তিনজন নতুন এবং প্রথমবারের বিধায়ক। বিধানসভার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বারবার যদি উনি বিধানসভা চলাকালীন ষড়যন্ত্র করে বিধানসভাকে যদি ভন্ডুল করে দেন, তাহলে আমরা শিখব কোথা থেকে! আমার বিধানসভার বাসিন্দারাও তো আমার কাছে প্রশ্ন করে যে বিধানসভায় গিয়ে আপনারা কী করলেন! বিধানসভায় আপনাদের কার্যকলাপ কী ছিল! আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব রয়েছে। আমরা তাদের কী জবাব দেব? বারবার এইভাবে বিধানসভা বন্ধ করে দিলে কি রাজ্যের উন্নতি হবে? উনি কী চাইছেন! বিরোধী মানে কি সব কথায় বিরোধিতা করা? যদি পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজ হয় তাহলে আমাদের তার সমর্থন করতে হবে। আর এই প্রশ্নগুলো তোলাতেই উনি সরাসরি সবার সামনে আমাকে হুমকি দিয়ে গেলেন যে- মিস্টার কল্যাণী, কালকেই আপনার ওখানে ইনকাম ট্যাক্স পাঠাবো আমি। তারপর বুঝবেন ঠেলা।’ এই হুমকির বিরুদ্ধে তাঁরা শুভেন্দু অধিকারী বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ আনছেন বলেও জানিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক।