বিনোদন
ভাল থেকো শিল্পী না ফেরার দেশে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কলকাতায় গাইতে আসবেন দারুণ খুশি ছিলেন কে কে। অনুষ্ঠানে আসার আগে ভিডিও বার্তায় খুশির ঝলক দেখা গিয়েছিল চোখে-মুখে। সেই ভিডিওই এখন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে।
কেকে আসছেন কলকাতায়। সাজো সাজো রব ছিল তিলোত্তমায়। নেটপাড়ায় তখন টিকিটের জন্য হাহাকার। একটা টিকিট পাওয়ার জন্য সর্বস্ব দিতেও রাজি অনুরাগীরা। পরপর শো করছিলেন কেকে। মঙ্গলবার রাতে উল্টোডাঙার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান ছিল নজরুল মঞ্চে। বিশেষ চমক কেকে। মঞ্চে চেনা ছন্দেই দেখা মিলেছিল গায়কের। একের পর এক সুপারহিট গান গাইছিলেন তিনি। গানের তালিকায় ছিল তাঁর গাওয়া ২০ টি সুপারহিট গান। ‘পল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’ থেকে শুরু করে ‘দিল ইবাদত কর রাহা হ্যায়’ কোনটায় বাদ পরেনি তাঁর তালিকা থেকে। শেষ গান ছিল ‘হাম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কাল’। মুহূর্তের মধ্যে এই গানই হয়ে উঠল চিরসত্য।
এদিন অনুষ্ঠান চালাকালীন অসুস্থ বোধ করেন তিনি৷ বেশ কিছু ভিডিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে৷ সেরকমই একটি ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর কেকে-র ঘাম মোছা এবং জল খাওয়ার মুহূর্ত৷ আচমকাই নাকি এসি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় নজরুল কর্তৃপক্ষ। তাঁর একটাই কারণ অতিরিক্ত ভিড়। বিগত কিছুদিন ধরে কলকাতায় কেকে-র অনুষ্ঠান ঘিরে তুমুল উন্মাদনা দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর কনসার্টের টিকিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয় তুমুল উত্তেজনা। নজরুল মঞ্চের ভিতরে যত মানুষ ধরে, গতকাল তার থেকে প্রায় ৩ গুণ বেশি দর্শক ছিল। সঙ্গে ছিল তীব্র অস্বস্থি, লাগামছাড়া ভিড়। এসি বন্ধ করে দেওয়ায় রীতিমত অসুস্থবোধ করেন কেকে। দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় শিল্পীকে। নজরুল মঞ্চ থেকে প্রায় মিনিট কুড়ি দূরে অবস্থিত ধর্মতলার গ্র্যান্ড হোটেলে পৌঁছানোর পর হোটলে রুমের সোফায় বসতে গিয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন… সেই সময়ই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন কেকে। তবে হল না শেষ রক্ষা। সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে এমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বুধবার বাঁকুড়া থেকে জেলা সফর সেরেই তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে রবীন্দ্র সদনের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। গান স্যালুটের মধ্যে দিয়ে কলকাতায় শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় শিল্পীকে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বাবুল সুপ্রিয় ও ফিরহাদ হাকিম। স্বামীর মৃত্যুর খবরে মরদেহ মুম্বইয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন স্ত্রী জ্যোতি এবং ছেলে নকুল। বিকেল ৫টা ১৫-এর ফ্লাইটে মুম্বইয়ে ফিরে যান তাঁরা। আগামীকাল মুম্বইয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কে কে-র। মুম্বইয়ের ভারাসোভা শ্মশানে হবে কে কে-র শেষকৃত্য।
১৯৬৮-র ২৩ অগাস্ট, দিল্লিতে জন্ম কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের। সঙ্গীত দুনিয়ায় কে কে নামেই পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। কিরোরি মল কলেজের প্রাক্তনী কে কে নিজের গানের জাদুতেই অসংখ্য অনুরাগীর হৃদয় জয় করেছেন। বলিউডে বহু প্লে-ব্যাক করেছেন। হিন্দি ছাড়াও বাংলা, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, গুজরাতি, মারাঠী ভাষাতেও বহু গান গেয়েছেন। ইন্ডিয়ান পপ, রক মিউজিকে আলাদা করে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছিলেন কেকে। ১৯৯৯ সালে ‘পাল’ অ্যালবাম দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। প্রথম অ্যালবামের ‘হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ওই বছরই হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমার ‘তাড়াপ তাড়াপ’ গানটি তাকে রাতারাতি খ্যাতি এনে দেয়। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। জারা সা দিলমে, তুহি মেরি সাব হে, ক্যায়া মুঝে পেয়ার হে, আলবিদা একের পর এক সব গান দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন বলিউডকে। তবে শুধু ভারত নয় উপমহাদেশজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ছোটবেলায় ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক করার পর হোটেলে কাজ করতেন। আট মাস পর হোটেলের সেই চাকরি ছেড়ে দেন ভবিষ্যতের তারকা। বিয়ের প্রায় তিন বছর পর ১৯৯৪ সালে মায়ানগরী মুম্বইয়ে চলে আসেন। তারপরই শুরু কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের যাত্রা। তাঁর গানে মন্ত্রমুগ্ধ ছিল গোটা প্রজন্ম।
কে কে-র মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর কলকাতার বেসরসারি হাসপাতালের বাইরে ভিড় জমাতে থাকেন তাঁর অনুরাগীরা। শোকে ভেঙে পড়েন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি, গান শেয়ার করে তাঁকে স্মরণ করেন গুণমুগ্ধরা। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া সংগীতজগতে। কেকে-এর প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সেলেব দুনিয়ার ব্যক্তিত্বরা তাঁদের শোকজ্ঞাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করেছেন সকলেই। টুইট করেছেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার থেকে শুরু করে শ্রেয়া ঘোষাল, সোনু নিগম, বিশাল দাদলানি থেকে মোহিত চৌহন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ট্যুইটে নিজেদের মনের কথা জানিয়ে শোক বার্তা দিয়েছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী, অনুপম রায়ের সঙ্গে বাংলার তারকা সঙ্গীতশিল্পীরাও।
হম, রহে ইয়া না রহে কাল… কাল, ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’, গানের মতো সত্যিই প্রতিটি দেশবাসী তাঁকে মনে রাখবে। মনে রাখবে তাঁর সৃষ্টিকে। মনে রাখবে তাঁর শিল্পসত্তাকে।