খেলা-ধূলা
হার্দিক-মিলারের দাপটে আবির্ভাবেই আইপিএল ফাইনালে গুজরাত
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬ রান। ওভারের প্রথম তিন বলেই কিলার মিলারের ছক্কার হ্যাটট্রিকে আবির্ভাবেই নিজেদের ঘরের মাঠ আহমেদাবাদে আইপিএল ফাইনাল খেলার টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল গুজরাত টাইটান্স। মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে রুদ্ধশ্বাস প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ও ডেভিড মিলারের শতরানের পার্টনারশিপে রাজস্থান রয়্যালসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিল গুজরাত।
দু’বছর পর ইডেনে আইপিএল ম্যাচ হওয়ায় শহর কলকাতার উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কলকাতা নাইট রাইডার্স না থাকলেও বাংলার ছেলে ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ সামি এবং অতীতে কেকেআরে খেলে যাওয়া শুভমন গিল, লকি ফার্গুসন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণদের হয়ে গলা ফাটাতে গ্যালারিতে ভিড় জমাতে কোনও কার্পণ্য করেনি শহরের ক্রিকেটপ্রেমীরা। গুজরাতের হয়ে খেলা বাংলার দুই ক্রিকেটার ঋদ্ধি ও সামি অবশ্য ব্যর্থ। তবুও দর্শকদের সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখলেন জস বাটলার, ডেভিড মিলাররা।
মঙ্গলবারের ইডেন ছিল কানায় কানায় ভর্তি। টসে জিতে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গুজরাতের অধিনায়ক হার্দিক। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের (৩) উইকেট দ্বিতীয় ওভারেই খুইয়ে বসে রাজস্থান। তাঁকে ফেরান যশ দয়াল। এরপর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে রাজস্থানের স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যান বাটলার ও অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁদের ৬৮ রানের পার্টনারশিপ রাজস্থানের বড় রানের ভিত গড়ে দেয়। স্যামসনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন সাই কিশোর। ২৬ বলে ৫ বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৭ রান করেন রাজস্থান অধিনায়ক।
দেবদত্ত পারিক্কল করেন ২৮ রান। তাঁকে ফেরানো হার্দিক। বাকি ওভার গুলোতে রান তোলার দায়িত্ব একাই নিজের কাঁধে তুলে নেন বাটলার। ৫৬ বলে এক ডজন বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৮৯ রান করে শেষ ওভারের রান আউট হন তিনি। বাটলারের এই ইনিংসের সৌজন্যেই কুড়ি ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৮ রান তোলে রাজস্থান। গুজরাতের হয় দয়াল, কিশোর, হার্দিক ও সামি একটি করে উইকেট নিয়েছেন। ঘরের মাঠে এদিন সেইভাবে দাগ কাটে ব্যর্থ সামি। ম্যাচে তাঁর একমাত্র শিকার হেটমায়ার (৪)।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ঘরের মাঠে সাজানো মঞ্চে ব্যর্থ ঋদ্ধিমান সাহাও। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বোল্টের ডেলিভারিতে স্যামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফেরেন ঋদ্ধি (০)। তবে গুজরাতের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে দেন প্রাক্তন নাইট ওপেনার শুভমন গিল ও ম্যাথু ওয়েড। দু’জনের ৭১ রানের পার্টনারশিপ গুজরাত ড্রেসিংরুমে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার স্বপ্নকে উজ্বল করে দেয়। গত মরসুম পর্যন্ত নাইট রাইডার্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য থাকায় ইডেনের ২২ গজকে খুব ভালো করেই জানতেন গিল। তাই তাঁর ব্যাট থেকে বেরোনো শটগুলো সীমানা পার হতেই ইডেনের গ্যালারি থেকে মুহুর্মুহু উঠছিল ‘কেকেআর..কেকেআর’ চিৎকার। তবে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও শুরুটা ভালোই করে দিয়ে যান গিল। ২১ বলে ৫ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৫ রান করে রান আউট হন তিনি। ওয়েড হাফ ডজন বাউন্ডারির সাহায্যে ৩০ বলে করেন ৩৫ রান। তাঁকে ফেরান ম্যাকয়। ৮৫ রানে তৃতীয় উইকেট পড়লেও তখনও জয় থেকে অনেকটাই দূরে গুজরাত। কিন্তু অধিনায়ক হার্দিক এবং কিলার মিলার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। দু’জনের ১০৬ রানের পার্টনারশিপ গুজরাতের জয় নিশ্চিত করে দেয়। তবে হার্দিকের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ম্যাচের সেরা মিলার। তাঁকে থামানোর কোনও রাস্তাই খুঁজে পাননি অশ্বিন, চাহালরা। ১৯ ওভারে গুজরাতের রান ছিল ১৭৩। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ১৬ রান। ম্যাচে তখন টানটান উত্তেজনা। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে নাটকীয় জয় এনে দেন মিলারই। ৩৮ বলে তিন বাউন্ডারি ও পাঁচ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৬৮ রান করে অপরাজিত থেকে যান তিনি। হার্দিক ২৭ বলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্য ৪০ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন।