দেশের খবর
বাগদেবীর আরাধনার মধ্যেই সুর থামল স্বরস্বতীর গলায়! প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : শনিবারই রাজ্য তথা গোটা দেশেই পালিত হয়েছে সরস্বতী পুজো। বাগদেবীর আরাধনার মধ্যেই সুর থেমে গেল ভারতীয় সঙ্গীত জগতের ‘সরস্বতীর’ গলায়। প্রয়াত হলেন লতা মঙ্গেশকর। রবিবার সকালে জীবনযুদ্ধে হার মানলেন ৯২ বছর বয়সি কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী। করনো আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ দিন ধরে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ১১ জানুয়ারি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি তাঁর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। করোনা থেকে মুক্ত হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। শনিবারই তাঁর অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। সেখান থেকে আর তাঁকে ফেরানো গেল না। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা এবং দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্তদের প্রার্থনাকে ব্যর্থ করেই প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী। এর আগেও লতা মঙ্গেশকরকে সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল লতাকে। কিন্তু অনুরাগীদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর হল না। ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম হয় এক মারাঠি সঙ্গীত পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী পন্ডিত দিনানাথ মঙ্গেশকর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান লতা। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩ বছর বয়সে মারাঠি ছবিতে প্রথম গান গাওয়া।
১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবি ‘মজবুর’-এ প্রথম প্লেব্যাক করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে সব ভাই বোনদের মধ্যে লতাই ছিলেন বড়। তাঁর বোন ঊষা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলে কিংবদন্তি গায়িকা। কিন্তু লতা ছিলেন সবার থেকে আলাদা। তাঁর গলার সুরে মোহিত হয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। তিনি চলে গেলেও তাঁর গলার সুর অনেক আগেই অমরত্ব লাভ করেছে। লতা মঙ্গেশকরের আসল নাম ছিল হেমা। পরবর্তীকালে তাঁর বাবার নাটকের এক চরিত্র লতিকার নাম অনুসারে তাঁর নাম হয় লতা। লতা মঙ্গেশকর ছিলেন ভারতীয় সংগীত জগতে একটি ব্র্যান্ড। তাঁর কণ্ঠ কয়েকটি প্রজন্মকে প্রেমে পড়তে শিখিয়েছেন। তাঁর গলায় ছিল অদ্ভুত রোমান্টিসিজম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তিনি তাঁর সুরের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন সকলকে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর গুণমুগ্ধরা রয়েছেন গোটা বিশ্বে। তাই গোটা বিশ্বে তিনি ‘নাইটেঙ্গল অব ইন্ডিয়া’ বলেই পরিচিত। সুদীর্ঘ সঙ্গীত কেরিয়ারে যেমন পেয়েছেন গোটা বিশ্বের ভালোবাসা, সম্মান, তেমনি পেয়েছেন ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে সম্মান। বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় প্রায়ই চলত তুলনা। কিন্তু কোনদিনই সেই বিতর্কে ঢোকেননি আপাদমস্তক ভদ্র, নিষ্ঠাবান, সদাহাস্যময় লতা। গোটা সঙ্গীতজীবনে তিনি যে অনুশাসন আয়ত্ত করেছিলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা ধরে রেখেছিলেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি বেশকিছু গানে সুর করেছেন। সঙ্গীত থেকে বেশ কিছুদিন দূরে থাকলেও বরাবরই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলেন খুবই অ্যাক্টিভ। খেলাধুলো হোক বা যে কোনও ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দিতে ভুলতেন না। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, তামিল, তেলুগু, একাধিক ভাষায় অগুনতি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ততাঁর গাওয়া ‘অ্যায় মেরে বতন কি লোগো’ দেশবাসীর দেশাত্মবোধকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। তাই তিনিই একমাত্র সপ্তসুরের মাধ্যমে সদর্পে বলতে পেরেছেন, ‘নাম গুম জায়েগী, চেহরা ইয়ে বদল জায়েগা, মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায়।’