বাংলার খবর
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গা পুজোয় বাড়ির বধূরা সপ্তমী থেকে নবমী কুমারী পুজো করেন
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : প্রাচীন ঐতিহ্য ও নিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে মুর্শিদাবাদ জেলায় যে কয়েকটি রাজা, জমিদার ও বনেদি বাড়িতে কয়েক শতাব্দী ধরে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে তাদের মধ্যে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গা পুজো অন্যতম। পূর্ব বাংলার সরাইল পরগনার প্রথম জমিদার জগবন্ধু রায়ের নিবাস ছিল এই রাজবাড়ি। তবে ১৭৪০ সালে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গা পুজো শুরু করেন অযোধ্যারাম রায়। তার আদি বাড়ি ছিল বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে। ব্যবসার জন্য তিনি মুর্শিদাবাদে চলে আসেন।
তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র জগৎবন্ধু রায় ব্যবসায় দায়িত্ব নেন। কিন্তু চালাতে না পারায় ব্যবসা উঠে যায়। ব্যবসা উঠে যাওয়ার পর তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন। তাঁর হাত ধরেই ধীরে ধীরে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পত্তন হয়। তাঁর আমল থেকেই আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গা পুজো শুরু হয়। প্রায় তিনশো বছর ধরে একইভাবে রাজবাড়িতে উমার আরাধনা হয়ে আসছে। রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। কাঠামো পালটানো হয় না। দেবীকে বিদায় জানানোর পরে কাঠামো নিয়ে এসে রাজবাড়ীর নাট মন্দিরে রাখা হয়। রাজবাড়ীর পুরোহিত গোপাল রায় জানিয়েছেন, রাজবাড়ির নিজস্ব পুঁথি অনুযায়ী পুজো হয়। সাতজন পুরোহিত একসঙ্গে পুজো করেন। সপ্তমী থেকে নবমী- এই তিনদিন কুমারী পুজো হয়। রাজবাড়ীর বধূরা কুমারী পুজো করেন। অযোধ্যারামের সময় থেকে আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের পান, সুপারি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর রীতি আজও চলে আসছে।
একচালায় দেবী চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে অবস্থান করছেন। কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল গণেশের রঙ লাল। সিংহ অনেকটা ঘোড়ার মত দেখতে। একে সিন্ধুঘোটক বলা হয়ে থাকে। ভাজা, রকমারি তরিতরকারি দিয়ে মাকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন এক গামলা জলে রাজবাড়ীর সদস্যরা দেবীর চরণ দর্শন করে বিদায় জানান। একে দর্পণে বিসর্জন বলে। এরপরেই আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশী মহিলাদের সঙ্গে রাজবাড়ির বধূরা সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন। বিকেলে শোভাযাত্রা করে কাটি গঙ্গায় মাকে বিদায় জানানো হয়। রাজবাড়ীর পুজো দেখতে স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। পুজোর চারদিন কাশিমবাজার রাজবাড়ী পুরোনো মেজাজে ফিরে যায়।