ভাইরাল খবর
হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘কাশ’ বালিশের অভিনব প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এতদিন আমরা জেনে এসেছি বালিশ, তোশক তৈরি হয় তুলো দিয়েই। কিন্তু শারদোৎসবের অন্যতম প্রতীক কাশফুল দিয়েও যে বালিশ, তোশক, বালাপোষ তৈরি হতে পারে, তা হয়তো কারও মাথাতেই আসেনি।
বৃহস্পতিবার হাওড়ার শরৎ সদনে হাওড়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই এক অভিনব পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার কাশ ফুলকে তুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না, তা প্রশাসনিক আধিকারিকদের ভেবে দেখতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমার একটি আইডিয়া আছে। এই যে কাশ ফুল হয় বাংলায়। দেখবে পুজোর এক মাস আগে থেকে শুরু হয়, তার পর আর এক মাস। এই কাশফুল উড়ে চলে যায়, কোনও কাজে লাগে না। এই কাশফুল দিয়ে বালিশ এবং বালাপোষ তৈরি হতে পারে দারুণ ভালো। এবং ওই বালিশ তো লোকে অনেক দাম দিয়েও কিনতে চাইবেন, যাঁদের ক্ষমতা আছে। সুতরাং ওই কাশফুলটাকে তোমরা কী ভাবে ব্যবহার করতে পার দেখ তো! টেকনিক্যালি বা কেমিক্যালি- কী দিতে হবে জানি না।
সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু যদি যায়, তা হলে তো আমরা তা দিয়ে বালিশ বা বালাপোষ বানাতে পারি।’ শুধু তাই নয়, হাঁসের পালক দিয়ে ব্যাডমিন্টনের শাটলকক বাংলায় তৈরি করা নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত এক শিল্পপতি এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, ভারতে আর কোনও ক্লাস্টারে শাটল কক তৈরি হয় না। হয় চিন থেকে আসে, নাহলে কোনও ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়। এর জন্য দরকার হাঁসের পালক। এই প্রস্তাব রীতিমতো লুফে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ইট’স আ গুড আইডিয়া। হাঁসের পালক। তোমরা তো এখন হাঁসের পোল্ট্রি করছ। এখন তো গ্রামে গঞ্জে হাঁস আছে। সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে হাঁসের পালকটা সংগ্রহ করতে বলো। এটা নিয়েও দেখা যেতে পারে।
এবার দুয়ারে হাঁসের পালক!’ বৃহস্পতিবার এ বৈঠকেই জেলার সমস্ত সরকারি আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদের থেকে রীতিমতো কাজের খতিয়ান চান মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়া ভূমি দফতরের কাজে গাফিলতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়ায় প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি হস্তান্তর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। যা নিয়ে রীতিমতো রেগে যেতে দেখা যায় তাঁকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, ‘কারা এত বড় বড় নেতা দেখি একটু।’ মমতা বলেন “ল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের অনেকে ইচ্ছে করে ডিলে করিয়ে দিচ্ছে। আগে আমরা একটা সিস্টেম করেছিলাম। সেটা বন্ধ হয়েছে কেন? কার নির্দেশে হয়েছে? কারা এত বড় বড় নেতা দেখি”। এর পর কাজের খতিয়ান শুনে মমতা জিজ্ঞেস করেন কেন দীর্ঘদিন ধরে না হওয়া কাজ পড়ে রয়েছে।
এদিন পাঁচলার বিধায়ক গুলশন মল্লিককেও রীতিমতো ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে একাধিক শিল্প গড়ে উঠছে। সেখানে তিনি কোনও অশান্তির চেষ্টা করছেন কিনা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তার উত্তরে গুলশন মল্লিক অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্প কেন্দ্র গুলির মালিকরা অন্যান্য রাজ্য থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করাচ্ছেন। এলাকার স্থানীয় যুবকদের কাজ দিচ্ছেন না। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দেন, এলাকার ১০০ জন করে যুবককে বিনা পয়সায় ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে।শিল্পপতিরা জানান ট্রেনিং সম্পন্ন হলে তাদের সবাইকেই নিজেদের সংস্থায় তারা চাকরি দেবেন। এদিন হাওড়া উত্তরের বিধায়ক গৌতম রায়চৌধুরীকেও রীতিমতো ধমক দিতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। কিছুদিন আগেই অতিবৃষ্টিতে তাঁর এলাকায় জল জমে গেলে রাস্তায় চেয়ার নিয়ে জলের মধ্যেই প্রতিবাদ জানাতে বসে গিয়েছিলেন বিধায়ক।
এই নিয়ে রীতিমতো দলীয় এই বিধায়ককে তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়। কেন আপনি ওই ভাবে জলের মধ্যে চেয়ার নিয়ে বসবেন। এটা মনে রাখতে হবে গত ৮০ বছরে এই রকম বৃষ্টি কখনো হয়নি। এত বছরে হাওড়ার নিকাশির কোনও সংস্কার হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই হাওড়ায় জল জমার সমস্যা মেটাতে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী- তিনটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। তাই এরকম কোনও আচরণ আর কখনও করবেন না। এতদিন অনেক কিছু নিয়েছেন। এবার সাধারন মানুষকে কিছু ফিরিয়ে দিন। আমরা সবকিছু করে দিয়েছি। সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’ আগামী দুই বছরের মধ্যে হাওড়ায় ১০ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে বলে দিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্…