আন্তর্জাতিক
৫০ বছর ধরে জ্বলতে থাকা অমর জওয়ান জ্যোতি অনির্বাণ শিখা নিভল! যদিও নিভছে না বলে দাবি কেন্দ্রের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ৫০ বছর পরে নিভল নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটের অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখা। নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবারই সেই অগ্নিশিখা নিয়ে যাওয়া হয় নবনির্মীত ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’-এ।
দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া বীর সৈনিকদের সম্মান জানাতে এবং তাঁদের স্মরণে প্রায় ৫০ বছর ধরে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জ্বলছিল অমর জওয়ান জ্যোতি। ইন্ডিয়া গেটের পাশাপাশি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালেও দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সৈনিকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি সৌধতে অগ্নিশিখা জ্বালানো হয়। সূত্রের খবর, দু’টি সৌধ রক্ষণাবেক্ষণে জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। তাই খরচ ও লোকবল বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে শহিদ হওয়া ভারতীয় সেনাদের স্মরণে ইন্ডিয়া গেটের কাছে এই অমর জওয়ান জ্যোতি জ্বালান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। ওই যুদ্ধে জয়লাভের পরেই ভারতীয় জওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মিলিত লড়াইয়ে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ।
১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে এই স্মৃতিশৌধের উদ্বোধন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি। পাথরের স্তম্ভে উল্টো করে রাখা ৭.৬২ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং তার উপর একটি সেনা শিরস্ত্রাণের স্মারক রয়েছে এখানে। তার সামনে সর্বক্ষণ জ্বলত আগুনের শিখা। সেই স্মারক তৈরির পর থেকে প্রতিবার সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন সকালে অমর জওয়ান জ্যোতিতে শ্রদ্ধা জানান দেশের রাষ্ট্রপতি, দেশের প্রধানমন্ত্রী, নৌসেনা, বায়ুসেনা ও স্থলসেনার প্রধান। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়া গেটের কাছেই ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে গ্রানাইট পাথরের গায়ে সোনালি অক্ষরে খোদাই করে লেখা হয় এখনও পর্যন্ত শহিদ হওয়া ২৫ হাজার ৯৪২ জন শহিদ হওয়া জওয়ানের নাম।
২০২০ সালে সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন সকালে অমর জওয়ান জ্যোতির পরিবর্তে নবনির্মিত এই ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। এরপর শুক্রবার অমর জওয়ান জ্যোতির শিখা নিভিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সেই বিতর্ক। যদিও কেন্দ্রের দাবি, ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে প্রজ্জ্বলিত শিখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখা। কেন্দ্রের আরও যুক্তি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মবলিদান দেওয়া সেনার উদ্দেশে অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখা জ্বালানো হলেও সেখানে কোথাও সেই যুদ্ধে আত্মত্যাগী সেনাদের নাম নেই। ইন্ডিয়া গেটে খোদাই করা ৯০ হাজার সেনার নামের কেউই এই যুদ্ধে অংশ নেননি। সেখানে ১৯১৪ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া শহিদ ভারতীয় সৈনিকদের নাম খোদাই করা আছে।
আর নবনির্মিত ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহিদ হওয়াদের পাশাপাশি, পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে যুদ্ধে বা সশস্ত্র সংঘর্ষে শহিদ সেনাদের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় ‘অপারেশন পবন’-সহ স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে প্রতিটি যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রয়াত ভারতীয় সেনাদের নাম গ্রানাইট পাথরের উপর স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা আছে। যদিও সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নয় বিরোধীরা। তাদের দাবি শুধু নাম খোদাই করা আছে বলেই অনির্বাণ শিখার স্থান পরিবর্তন করতে হবে? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি টুইটারে এর তীব্র বিরোধিতা করে লেখেন, ‘দেশের জন্য শহিদ হওয়া বীর জওয়ানদের স্মরণে যে অমর জ্যোতি শিখা জ্বালানো হয়েছিল সেই শিখাই নিভিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু যাঁরা বলিদান কিংবা দেশপ্রেমের মানে বোঝেন না তাঁদের থেকে এটাই আশা করা যায়। কিন্তু কোনও ব্যাপার নয়, আমরা আবার আমাদের বীর জওয়ানদের জন্য অমর জওয়ান জ্যোতি জ্বালাব।’