বাংলার খবর
সিটের তদন্ত মানছি না! মুখ্যমন্ত্রীর দাবী নস্যাৎ করে সিটের আধিকারিকদের সামনেই সিটকে প্রত্যাখ্যান আনিসের বাবার
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : আনিস খানের মৃত্যু ঘিরে ক্রমাগত বাড়ছে রাজনৈতিক বিতর্ক। উল্লেখ্য, সোমবার আনিসের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিলেন আনিস খানের বাবা সালেম খান। প্রসঙ্গত আনিসের মৃত্যুতে বারবার শোনা যাচ্ছে শাসকদলের নানা কাজের সঙ্গে আনিসের মতান্তর ছিল বলে।
অন্যদিকে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন,নির্বাচনেন শাসক দলকে সহায়তা করেছিলেন আনিস। অন্যদিকে সালেম খান জানিয়েছেন, যদি তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ থাকত তাঁর ছেলের, তাহলে পুলিশ কিংবা পুলিশের সাজে দুষ্কৃতীরা এসে এভাবে মারতে পারত না আনিসকে। সব মিলিয়ে আনিস খানের মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পাশাপাশি মঙ্গলবার ফের বিশেষ তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা (সিট) মৃত আনিসের বাড়িতে যান। তাঁরা আনিসের বাবার সঙ্গে কথাও বলেন। তাঁদের সামনেই সিটকে অস্বীকার করেন সালেম খান। তিনি বলেন, ‘দিদিই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, ওঁকে অমান্য করব না। কিন্তু আপনাদের কেন পাঠাচ্ছেন? আপনারা কেন এসেছেন? কতবার একই কথা বলব?’ সিট-কে আলাদা করে বয়ান দিতেও তিনি অস্বীকার করেন। এবং পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সিটের তদন্ত তিনি মানছেন না।
তাঁর অভিযোগ, যেদিন আনিস খুন হলেন, সেদিন আমতা থানায় পুলিশকে ডাকলেও তারা আসেনি। সেই রাত কাটিয়ে পরেরদিন সকাল ৯টার পরে তারা আসে মৃতদেহ নিতে। এরপর পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা উলুবেড়িয়াতে নিয়ে চলে যায় মৃতদেহ। আর আমতা থানাতে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা করার আগেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শুরু করে দেয় পুলিশ। আনিসের বাবা সিটের সদস্য ও পুলিশ কর্তাদের বলেন, এটা কোথাকার নিয়ম। তাঁর প্রশ্ন, তাঁর ছেলেকে পুলিশ খুন করল। তারপরে তারাই আবার মৃতদেহ নিয়ে গেল। সেই মৃতদেহের ময়নাতদন্তও করল পুলিশ। আবার সেই পুলিশ ‘সিট’ তৈরি করে দিচ্ছে। তাহলে কীভাবে সেই সিটের উপরে ভরসা বা বিশ্বাস রাখা যায়, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি। তাই প্রয়াত আনিসের বাবা সিটের আধিকারিকদের সামনেই সিবিআই তদন্তের দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়ে দেবেন সিটের তদন্ত আমরা মানছি না। আমরা চাই সিবিআইকে দিয়ে আনিসের মৃত্যুর তদন্ত হোক। আজ সকালে আমতা থানার তিনজন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে শুনেছি। শুনে ভালোলাগলেও এটা পর্যাপ্ত নয়। এখনও আমার ছেলের খুনিরা অধরা রয়েছে। তাদের শাস্তি চাই।
‘ পাশাপাশি, আনিসের পরিবারের লোকেরাও দাবি করেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে সন্মান করেন। তিনি সিট তৈরি করেছেন, তাই তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন পরিবারের লোকেরা। তবে তিনি কেন সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে চাইছেন না, সেটা তাঁদের কাছে খুবই আশ্চর্যের বিষয়। মঙ্গলবার সিটের সদস্যরা বহুভাবে সালেম খানকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। তবে জোয়ান ছেলে হারানো পিতা বৃদ্ধ সালেম খান সিবিআইয়ের দাবিতেই অনড় থাকেন। এদিন আবার নতুন করে ওই রাতের পুরো ঘটনা সিটের তদন্তকারী অফিসারেরা সালেম খানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
প্রসঙ্গত, সিট গঠনের পর থেকেই রাজ্য পুলিশের তদন্ত মানবেন না বলে জানিয়েছিলেন আনিসের পরিবার। সোমবার রাতে সিটের সদস্যরা আনিসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। মঙ্গলবার তাঁরা ফের আনিসের বাড়িতে যান। পুত্রহারা পিতাকে বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করলেও নিজের অবস্থান বজায় রাখেন আনিসের পিতা।