বাংলার খবর
আমি রাজ্য বিজেপির কেউ নই! দিলীপ ঘোষদের তীব্র আক্রমণ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: পথদুর্ঘটনায় প্রয়াত ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাসকে এবারের পুরভোটে দল প্রার্থী না করায় আগেই বোমা ফাটিয়ে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।টাকা দিয়ে প্রার্থী করারও অভিযোগ তিনি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এনেছিলেন।
রবিবার ভোট দিতে এসেও একই অভিযোগ তুলে পদ্ম শিবিরকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন মহাভারতের দ্রৌপদী। শুধু তাই নয়, নাম করে দিলীপ ঘোষকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। এবং সেই সঙ্গেই ‘বিদ্রোহী’ রূপা জানিয়ে দেন তিনি রাজ্য বিজেপির কেউ নন! এদিন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আজও তিস্তার পাশে আছি। ওর উপহার দেওয়া শাড়িটা পড়েই আমি আজ এখানে ভোট দিতে এসেছি। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে কিছু জায়গায় টাকা দিয়ে প্রার্থী কেনা হয়েছে। আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত। আর আমার কাছে তার প্রমাণও আছে।’ এরপরই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর অনুগামীদের তীব্র আক্রমণ করেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
এবং দলীয় নেতৃত্বের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নতুন এসেছেন। তিনি অনেক কিছুই চিনে, বুঝে উঠতে পারেননি। দিলীপবাবুর পুরো টিমটা রয়েছে। তারা যদি এখনও বদমাইশি না থামান, তা হলে তো মুশকিল। বেকার কোনও কমিটির মেম্বার হওয়ার কারণ নেই। কমিটিতে একটা কথা বলার জন্য, শিঙাড়া খাওয়ার জন্য আগ্রহী নই। ও রকম ভাবে ডেকে একটা বৈঠকে বসিয়ে রেখে, সিদ্ধান্ত চারটে লোক নেবে। আমি রাজ্য বিজেপির কেউ নই। আমার বিরুদ্ধে দল বিরোধী কাজের কোনও অভিযোগ উঠলে যেখানে জবাব দেওয়ার সেখানেই দেবো।’ পুরভোটে এবারে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করেছে সেই রাজর্ষি লাহিড়ীকে তিনি রাজ্য ও জাতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বলেই এদিন দাবি করেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বলেছেন, ‘যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন তাঁকে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম আমি। তাঁকে সবার কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমার অবদান সবথেকে বেশি।
‘ পাশাপাশি এদিনের ভোটে তৃণমূল বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন বুথে রিগিং করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। দলীয় সাংসদদের এহেন মন্তব্য নিয়ে যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০১৫ সালে বিজেপি-র টিকিটে জয়ী তিস্তা দাস বিশ্বাস এক পথদুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর এবারে ওই ওয়ার্ডে তাঁর স্বামী গৌরব বিশ্বাসকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু ওই ওয়ার্ড থেকে বিজেপি প্রার্থী করে রাজর্ষি লাহিড়ীকে। এর পরেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন জমা দেন গৌরব। গৌরবের পাশে থাকার কথা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন রূপা। সমস্যা মেটাতে বিজেপি রাজ্য কমিটি বৈঠকে বসেছিল। সেই বৈঠকে দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
জানা যায়, তাঁর প্রস্তাব না মানায় ‘ভোটের বৈঠকে আমাকে কেন ডাকেন’ বলে হঠাৎই মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। তারপরই দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট করেন তিনি। সেই পোস্টেই তিনি তিস্তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে গৌরবের পাশে থাকার বার্তাও দেন। এবং টাকার বিনিময় বিজেপি প্রার্থী নির্বাচন করেছে বলেও অভিযোগ করেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। আজ ভোট দিতে এসে আবারও সেই একই অভিযোগ শোনা গেল তাঁর গলায়। যা রাজ্য বিজেপি কে আরও বড় অস্বস্তিতে ফেলে দিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।