বাংলার খবর
প্যারিসে ওয়ার্ল্ড স্কুল স্পোর্টসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেল হুগলির জয়ীতা মালিক

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি দিচ্ছে হুগলির জয়ীতা মালিক। আগামী ১৪ থেকে ২২ মে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ওয়ার্ল্ড স্কুল স্পোর্টস। সেই গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন ১৩ জন প্রতিনিধি। সেই দলে রাজ্য থেকে একমাত্র সুযোগ পেয়েছে হুগলির জয়ীতা। গোটা বিশ্ব থেকেই প্রতিযোগীতায় অংশ নেবেন প্রতিযোগীরা। ভারত থেকে ১৩ জন প্রতিযোগী এই গেমসে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে। তারমধ্যে বাংলা থেকে একমাত্র অ্যার্টিস্টিক জিমনাস্টিক্সে সু্যোগ পেয়েছে হুগলির চুঁচুড়ার চকবাজার তিন নম্বর সোনাটুলীর বাসিন্দা জয়ীতা মালিক। জয়ীতা হুগলী গার্লস স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। এই প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করার ব্যাপারে আশাবাদী জয়ীতা।
আরও পড়ুন: গরম থেকে স্বস্তি পেতে শাস্ত্রমতে রীতিমতো মন্ত্র পড়ে দেওয়া হল ব্যাঙের বিয়ে!
জেলার এই উদীয়মান অ্যাথলেটি বলছিল, ‘প্যারিসে ওয়ার্ল্ড স্কুল স্পোর্টসের যে আসর বসতে চলেছে, তাতে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি। রাজ্য থেকে একমাত্র আমিই সুযোগ পেয়েছি। তাই ওখানে ভালো ফল করে রাজ্য তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। পরিশ্রম করছি। আশা করছি প্রত্যাশামতো ফল করতে পারব।’ জয়ীতার বাবা জয়ন্ত মালিক পোলিও আক্রান্ত। মেলায় প্লাস্টিকের খেলানা বিক্রির পাশাপাশি চকবাজার পোস্ট অফিসে সামান্য দিন মজুরির কাজ করেন। দুই সন্তানকে নিয়ে টানাটানির সংসার। খেলাধূলার প্রতি ঝোঁক দেখে চার বছর বয়স থেকেই জয়ীতাকে জিমনাস্টিক্সে ভর্তি করে দেন জয়ন্ত বাবু। মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে নিজের কাজের অসুবিধা হয়েছে। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি। এতে সংসার কোনও ভাবে চলে গেলেও ভালোভাবে চলে না। এবার মেয়ে প্যারিসে ওয়ার্ল্ড স্কুল স্পোর্টসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়ায় আনন্দের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে মালিক পরিবারে।
আরও পড়ুন: সংঘাতে রাজ্য-রাজভবন, বাবুলের শপথ গ্রহণের ফাইল ফেরত পাঠালেন রাজ্যপাল
প্যারিসে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য খরচ আড়াই লক্ষ টাকা। সামান্য রোজগারে এই টাকা জোগাড় করা একপ্রকার অসম্ভব। তবুও হাল ছাড়েননি জয়ন্ত বাবু। স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে, আত্মীয়দের থেকে ঋণ করে মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছেন। দরকার আরও টাকা। কী করে সবকিছু সামলাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে মেয়ে ফ্রান্সে ভালো ফল করুক, এটাই তাঁর একমাত্র প্রত্যাশা। জয়ীতার মা সুমিতা মালিক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকার কাজ করেন। অনেক কষ্ট করে মেয়ের প্যারিসে যাওয়ার টাকা জোগাড় করেছেন। মেয়ে সফল হবে বলেই আশাবাদী তিনি। বলেছেন, ‘প্যারিসে যাওয়ার জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচা। যা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে এক কথায় অসম্ভব। সেই ভাবে কোনও সাহায্য পাইনি। ব্যাংকে আমার কিছু গহনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছি। এছাড়াও প্রতিবেশী ও আশেপাশের মানুষের থেকেও টাকা ধার করেছি। আমরা চাই মেয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে সফল হোক। এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করুক। ওর বাবাই সবদিক সামলাচ্ছে। সকালে ও বিকালে প্রাকটিসে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা থেকে শুরু করে সবকিছুই করে ওর বাবা। মেয়েও যথেষ্ট পরিশ্রম করছে। আশা করছি ও সফল হবে।’
আরও পড়ুন: ২ মে থেকে স্কুল-কলেজে গরমের ছুটির পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর
ভোর চারটেয় উঠে সাইকেল করে বাঁশবেড়িয়ায় প্র্যাকটিস। বাড়ি ফিরেই স্কুল। আবার বিকাল পাঁচটায় অনুশীলন। দু’বেলা অনুশীলন করার পাশাপাশি পড়াশোনাও সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে দীপা কর্মকারের ভক্ত জয়ীতা। ইতিমধ্যেই ৩টি স্কুল ন্যাশনাল ও ২টি খেলো ইন্ডিয়া- মোট ৫টি ন্যাশনালে অংশ নিয়েছে জয়ীতা। তারমধ্যে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত শেষ খেলো ইন্ডিয়া ন্যাশনালসে আনইভেন বারে তৃতীয় স্থান পেয়েছে। অনুশীলনের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যেও জয়ীতার সাফল্য নিয়ে আশাবাদী তার কোচ মৌনা কর্মকার। তিনি বলেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড স্কুল স্পোর্টসের জন্য জয়ীতা ভারতীয় দল নির্বাচিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। আশা করছি ও সফল হবে। আমাদের এখানে অনুশীলনের জন্য উন্নত মানের পরিকাঠামো নেই। চোট লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। ও যথেষ্ট পরিশ্রম করছে। গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত শেষ খেলো ইন্ডিয়া ন্যাশনালসে আনইভেন বারে ও তৃতীয় হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাতেও ও ভালো ফল করবে বলেই আমরা আশাবাদী। টাকা-পয়সার সমস্যা রয়েছে। আমরা সব রকম ভাবে যতটা সম্ভব ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’ জয়ীতা জানে, মা-বাবার কষ্ট দূর করতে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে সেরাটা দিতে হবে তাকে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ‘মিশন প্যারিস’ এর জন্য চলছে জোরকদমে অনুশীলন।