বাংলার খবর
অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস গড়লেন পিয়ালী, এবার লক্ষ্য লোৎসে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আড়াইশো বছর আগে হুগলির রাধানগর গ্রামে আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। আর এই দিনেই অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করে নজির গড়লেন হুগলি জেলারই মেয়ে পিয়ালী বসাক।
দেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় করলেন চন্দননগরের মেয়ে পিয়ালী। রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌঁছন পিয়ালী। দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে গত অক্টোবরেই কোনরকম সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়াই ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করেছিলেন পিয়ালী। সাত মাসের মধ্যেই আবারও অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস গড়লেন তিনি।
আরও পড়ুন: পায়ে হেঁটে হাওড়া টু লাদাখ, কীর্তিমান যুবককে কুর্নিশ বাম যুব সংগঠনের
পিয়ালীর এই কৃতিত্বে খুশি রাজ্যের পর্বতারোহী মহল। এভারেস্টজয়ী বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় বলেছেন, ‘অসাধ্য সাধন করেছেন পিয়ালী। এই কৃতিত্বের জন্য ওকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
পিয়ালীর এই সাফল্য নিয়ে বসন্ত সিংহ রায় বলেছেন, ‘এই সাফল্য কথায় বর্ণনা করার ভাষা নেই। আমিও এভারেস্টে উঠেছি। অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় তো ভাবাই যায় না। ক্যাম্প-৩ এর পর থেকেই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। সেখান থেকে ক্যাম্প ৪ হল ৮০০০ মিটার উঁচুতে। তারপর সামিট। ও যখন অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট ওঠার পরিকল্পনা করে তখন আমার মনে হয়েছিল, এটা কি সম্ভব? তারপরও ও যে পেয়েছে তা অভাবনীয়। ও এখনও নামেনি। প্রার্থনা করি ও সুস্থভাবে নেমে আসুক।’ পিয়ালীর অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় নিয়ে সপ্তশৃঙ্গ জয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত বলেছেন, ‘অসাধারণ সাফল্য। বাঙালি হিসেবে এই সাফল্য গর্বের। এভারেস্টে আট হাজার মিটার উচ্চতায় অক্সিজেন ছাড়া ওঠাটা বিশাল বড় অ্যাডভেঞ্চার। পর্বতারোহীদের কাছে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিলেন পিয়ালী। ওকে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল।’
আরও পড়ুন: ‘একদিকে কাউন্টডাউন শেষ, আরেক দিকে কাউন্টডাউন শুরু’, দলবদলের জল্পনা উস্কে বিস্ফোরক অর্জুন সিং
এর আগেও ২০১৯ সালে এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার জন্য সামনে থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল চন্দননগরের এই ‘ধন্যি মেয়ে’ কে। সেবার ফেরার পথে অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করা বেশকিছু পর্বতারোহীর সঙ্গে আলাপ হয় পিয়ালীর। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন পরের বার তিনিও অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় করবেন। পিয়ালীর এই ইচ্ছের কথা আমরা বেঙ্গল এক্সপ্রেসে লিখেছিলাম। রবিবার সকালে সেই অসাধ্যসাধন করলেন পিয়ালী।
বাবা-মা অসুস্থ। বছর ৩১এর পিয়ালী চন্দননগর কানাইলাল প্রাথমিক বিদ্যামন্দিরে প্যারা টিচার হিসাবে কর্মরত। তাই স্বপ্ন পূরণে সবথেকে বড় বাধা হয়ে উঠেছিল আর্থিক সমস্যা। এভারেস্ট অভিযানের জন্য তাঁর দরকার ছিল ৩৫ লক্ষ টাকা। নিজের সমস্ত সঞ্চয় এবং বাড়ি বন্ধক রেখে ১৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন। স্বপ্নপূরণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও সাহায্যের আবেদন করেন পিয়ালী। তাতেও বেশ ভালোই সাড়া পান। এরপর পিয়ালীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তাঁর এজেন্সি। তারপরই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়।
শুধু এভারেস্ট জয় করেই থেমে থাকছেন না পিয়ালী। এবার তাঁর লক্ষ্য মাউন্ট লোৎসে জয় করা।
এভারেস্ট অভিযানের জন্য গত ১ মে বেস ক্যাম্পে পৌঁছন পিয়ালী। মে মাসের ৩ তারিখে এভারেস্ট জয়ের জন্য রওনা হয়েছিলেন পিয়ালী। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ৫ মে দ্বিতীয় বেস ক্যাম্পে পৌঁছন। এর পর এভারেস্ট জয় করতে এগিয়ে যান। জানা গিয়েছে, এই অভিযানে পিয়ালীর সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী দাওয়া শেরপা। এভারেস্ট জয় করে ক্যাম্প ৪-এ ফিরে বিশ্রাম নেবেন পিয়ালী। এর পর অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই মাউন্ট লোৎসের দিকে এগিয়ে যাবেন তিনি।
আরও পড়ুন: থার্ড লাইনে চলছে কাজ, ১৮ ঘণ্টা ট্রেন-পরিষেবা বন্ধ খড়্গপুর লাইনে
রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ পিয়ালীর বোন তমালি চন্দননগরের বাড়িতে থাকা মা স্বপ্না বসাককে প্রথম দিদির এই সাফল্যের খবরটি দেন। এরপরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন পিয়ালীর মা ও প্রতিবেশীরা। পিয়ালীর মা বলেছেন, ‘সকালেই খবর পেলাম পিয়ালীর পিক সামিট হয়ে গিয়েছে। আমাদের ও বারবারই বলতো, চিন্তা কোরো না। আমার কোনও সমস্যা হয় না। হাই অল্টিচিউডস সিকনেস আমার নেই। ফলে বিশাল কিছু চিন্তায় ছিলাম না। পিয়ালী আমার বড় মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই ও যা করে তা মন দিয়েই করে। এখন খুবই ভালো লাগছে। ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক এটাই আমার একমাত্র প্রার্থনা।’