বাংলার খবর
মুসলিম পরিবারে আশ্রয় হিন্দু ভবঘুরের! এক অনন্য নজির জলঙ্গীর সীমান্ত চরে

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : যেখানে কিছু মানুষ দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করছেন, জাতি ও ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে সেই ভারতবর্ষে এক সম্প্রীতির নজির দেখা গেল। মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী ব্লকের ঘোষপাড়া অঞ্চলের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত উদয়নগর চর কলোনি গ্রামের এক মুসলিম গৃহবধূ সাহানারা বিবি।
তিন বছর আগে এক শীতের বৃষ্টির সকালে চরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ভিজে শরীরে অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে সুব্রত বিশ্বাস নামে এক বাগান মালিক তাঁকে সাহানারা বিবির কাছে রেখে যান। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিজের নাম, ঠিকানা, পরিচয় কিছুই বলতে পারেননি ওই যুবক। ফলে সেই থেকে নিজের ছেলের মতো করেই ওই যুবককে মানুষ করছেন সাহানারা। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে কোনও কথা বলতে পারেন না ওই যুবক। ছাড়া পেলেই মাঝে মধ্যে গ্রামের অন্যের বাড়িতে চলে যায়। অনেকে মারধর করে। যা একদমই সহ্য করতে পারেন না সাহানারা। ওই নাম পরিচয়হীন ছেলেটিকে কেউ মারধর করলে তাদের দু’কথা শোনাতে ছাড়েন না সাহানারা।
তবে ঘটনা এড়াতে ওই ‘পালিত পুত্রকে’ চেন দিয়ে তালা মেরে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সাহানারা বিবি জানিয়েছেন, ‘মায়ের কাছে কোনও ধর্ম হয় না। মায়ের কোলে সন্তান হল প্রথম পরিচয়। যদি আমার নিজের গর্ভে ধারণ করতাম তাহলে ফেলে দিতে পারতাম না। এই ছেলেটা কারও না কারও মায়ের সন্তান। তাই সন্তান হিসেবেই লালন পালন করছি। যেদিন ওর স্মৃতি ফিরে আসবে, সেদিন ওর প্রকৃত বাবা-মায়ের কাছে ওকে তুলে দিতে পারলেই খুশি হব। ওর নাম পরিচয় এবং বাবা-মার খোঁজ পেতে লাখ দেড়েক টাকা খরচা করে ফেলেছি।’
স্নান করানো, চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে খাওয়ানো-দাওয়ানো, ডাক্তার দেখানো, সবই করেন তিনি। একইভাবে সুব্রত বিশ্বাস বলেছেন, ‘আমি অনেক জাগায় খোঁজ খবর নিয়েছি যাতে করে এই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটা নিজের পরিবার পায়। কিন্তু কোনও খোঁজ পাইনি। প্রশাসনও কোনও সুরাহা করতে পারেনি।
সকলের কাছেই আবেদন করেছি, যদি কেউ চিনে থাকেন তাহলে ওর পরিচয়টা জানান। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’ ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি এই চরে মানুষ করছেন সাহানারা বিবি। আমরা চাই এই ছেলেটা যদি তার পরিবারের কাছে যেতে পারে তাহলে আমাদের ভালো লাগবে।’