মহানগর
মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের মামলার শুনানি শেষ, ১১ তারিখের মধ্যেই রায় ঘোষণা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ মামলার শুনানি শেষ হল। বৃহস্পতিবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই মামলার শুনানি হয়। তবে এদিনই রায় ঘোষণা করা হয়নি। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ মতো আগামী ১১ মে-এর মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা করতে হবে স্পিকারকে।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই মামলায় আর কোনও শুনানি হবে না। তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে আগামী ৬ মে দুই পক্ষের আইনজীবীকে ডাকা হতে পারে। বিধানসভা সূত্রের খবর, আগামী ৮ অথবা ৯ মে’র মধ্যেই মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে রায় দেবেন অধ্যক্ষ। এদিনের শুনানিতে মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত না থাকলেও দুই পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগের শুনানি গুলোতে শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখানো মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে দাখিল করে দাবি করেন মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এদিনের শুনানিতে মুকুল রায়ের আইনজীবী সায়ন্তক দাস বিরোধীদের প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা সেই ভিডিও ফুটেজ গুলোকে ভুয়ো বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন। বিজেপি প্রমাণ হিসেবে যে সমস্ত নথিপত্র ও ভিডিও ফুটেজ দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো।’ গত বছরের ১১ জুন মুকুল রায়ের তৃণমূল ভবনে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর আইনজীবী দাবি করেছেন, কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক নাকি পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেই সেদিন তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
অপরদিকে, শুভেন্দু অধিকারী তথা বিজেপির আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য্য পাল্টা বলেছেন, ‘মুকুল রায় দলত্যাগ করেছেন। আমরা ভিডিও ফুটেজ এবং সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়, সংবাদমাধ্যমে সেই যোগদানের যে ভিডিও দেখানো হয়েছিল, তা তথ্য দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। আর আমাদের দেওয়া তথ্যগুলো ভুয়ো, তা এই প্রথমবার বললেন মুকুল রায়ের আইনজীবী। এর আগে এমন দাবি তারা করেনি।’ জানা গিয়েছে, শুনানি চলাকালীন বিজেপির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন। তখন বিজেপির আইনজীবী জানান, তাঁরা সংবাদমাধ্যম থেকে এই তথ্য পেয়েছেন। এবং সমস্ত সংবাদমাধ্যমেই সেই ছবি ও ভিডিও রয়েছে। তার উত্তরে নাকি স্পিকার বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে আপনারা শংসাপত্র নেবেন?’ এখন অধ্যক্ষ কী রায় দেন, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সকলে।
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হন মুকুল রায়। কিন্তু নির্বাচনের ফল বরোনোর এক মাসের মধ্যেই গত বছরের ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল রায়। তৃণমূল ভবনে সেই যোগদান অনুষ্ঠানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই দলত্যাগ আইনে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানান রাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্পিকার সেই আবেদন খারিজ করে দিলে মামলা গড়ায় হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে যাচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
দুই আদালত এই বিষয়টি অধ্যক্ষের কোর্টে পাঠিয়ে দিলে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন। দলত্যাগ করেননি। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ফের হাইকোর্টে যান শুভেন্দু অধিকারী। গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছেই বিষয়টি ফেরৎ পাঠিয়ে দেন। এবং মুকুল রায়ের দলত্যাগ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চার সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেন। তারপর গত ২২ এপ্রিল এই মামলার শুনানি থাকলেও, সেদিন মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী কেউই উপস্থিত হননি। তারপরই আজ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ।