খেলা-ধূলা
সব ধরণের ক্রিকেটকেই বিদায় জানালেন হরভজন সিং

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সব ধরণের ক্রিকেট থেকেই অবসর নিলেন হরভজন সিং। শুক্রবার টুইট করে এক ভিডিও বার্তায় অবসরের কথা ঘোষণা করেন ৪১ বছরের এই অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। ২৩ বছরের সুদীর্ঘ কেরিয়ারে ভাজ্জি ইতি টানায় ভারতীয় ক্রিকেটের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
আইপিএলে খেলা চালিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনেকদিন আগেই সরে এসেছিলেন। কিন্তু সরকারিভাবে অবসরের কথা ঘোষণা করা হয়নি। শুক্রবার তাই সবধরণের ক্রিকেট থেকেই সন্ন্যাস নিলেন টারবুনেটর। ফলে আইপিএলেও আর দেখা যাবে না তাঁকে। এই বর্ণময় কেরিয়ারে একাধিক সাফল্য ও বিতর্কের সাক্ষী থেকেছেন।তবে ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে হ্যাটট্রিক এবং সিরিজে ৩২ উইকেট নেওয়াটাই তাঁর কেরিয়ারের বিশেষ মুহূর্ত, তা বিদায় বেলায় জানাতে ভোলেননি। ভাজ্জি ভিডিও বার্তায় বলেছিল, ‘জলন্ধরের গলি থেকে ভারতীয় টিমে খেলা। ২৩ বছরের এক অসাধারণ যাত্রা শেষ হল। সব ভালো জিনিসই একদিন শেষ হয়।
আজ আমি এমন একটা খেলাকে বিদায় জানাচ্ছি যা আমার জীবনে সব কিছু দিয়েছে। ২৩ বছরের এই লম্বা যাত্রাকে যারা সুন্দর এবং স্মরণীয় করে রেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে অনেক ধন্যবাদ। ভারতের জার্সিতে খেলার থেকে বেশি অনুপ্রেরণা আর কিছুতে ছিল না। একটা সময় কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। সামনে এগিয়ে যেতে হয়। আজ আমি ক্রিকেটের সব ফর্ম্যাট থেকেই অবসর নিচ্ছি। অবসর হয়তো অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবছিলাম যে কবে আপনাদের সঙ্গে এই মুহূর্তটা ভাগ করে নেব। গত কয়েক বছরে সে ভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম না। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সময়ই গত মরসুমে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
কেকেআর- এর সঙ্গে আমার দায়বদ্ধতার কারণেই আগে ঘোষণা করতে পারিনি। বাকিদের মতো আমিও ভারতের জার্সিতেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবার ভাগ্য সমান হয় না। কিন্তু যে দলের হয়েই আজ পর্যন্ত খেলেছি, তাদের হয়ে ১০০ শতাংশ দিয়েছি। টিমকে সাফল্য এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার লম্বা কেরিয়ারে বাবা, মা, দিদিরা, আমার স্ত্রী পাশে থেকেছে। ওরা না থাকলে এত দূর আসাই হত না। কেরিয়ারের সেরা মুহূর্তের কথা যদি বলতে হয়, কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে হ্যাটট্রিককেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখব। ওই সিরিজে তিন টেস্ট মিলিয়ে ৩২ উইকেট নিয়েছিলাম। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি আর ২০১১ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জয় আমার সবচেয়ে তৃপ্তির, সাফল্যের সময়।
যাদের সঙ্গে খেলেছি, যাদের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব জয় শাহকে ধন্যবাদ। ক্রিকেট আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, থাকবেও। আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটে কোনও প্রয়োজনে লাগতে পারলে ধন্য মনে করব নিজেকে।’ এদিন কোচিংয়ে আসারও ঈঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম সফল অফ স্পিনার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে বেঙ্গালুরুতে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল হরভজনের। ওই টেস্টে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু আবির্ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অনেক দূর যাবেন। তারপই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের অন্যতম বিশ্বস্ত সৈনিক হয়ে ওঠেন। ১০৩ টেস্টে নিয়েছেন ৪১৭ উইকেট।
সেরা বোলিং ২১৭ রান দিয়ে ১৫ উইকেট। ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৫বার। ১০ উইকেট ৫বার। টেস্টে ব্যাট হাতে ২টো সেঞ্চুরিও রয়েছে হরভজনের। ওই বছরের পরের মাসেই শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ২৩৬ ওয়ান ডে ম্যাচে নিয়েছেন ২৬৯ উইকেট। সেরা বোলিং ৩১ রানে ৫ উইকেট। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, জোহানেসবার্গে। ২৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দুই ফরম্যাটেই ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন হরভজন। বিশেষত দেশের মাটিতে অনিল কুম্বলের সঙ্গে তাঁর জুটি বিশ্ব ক্রিকেটে ত্রাস তৈরি করেছিল।
আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংস এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা হরভজন ১৬৩ ম্যাচে নিয়েছেন মোট ১৫০ উইকেট।এই মরসুমে তিনি কেকেআর- এর সদস্য ছিলেন। প্রথম পর্বে তিনটি ম্যাচে খেললেও দ্বিতীয় পর্বে একটিও ম্যাচে সুযোগ পাননি। কেরিয়ারে একাধিক বার চোটের কবলে পড়েছেন। ফিরেও এসেছেন। বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ারে সাফল্যের পাশাপাশি জড়িয়েছেন বিতর্কেও। কেরিয়ারের শুরুর দিকে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়াই হোক, যা বিশ্ব ক্রিকেটে ‘মাঙ্কিগেট’ নামে পরিচিত কিংবা আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার শেষে শান্তাকুমারন শ্রীসন্থকে চড় মারা বা পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো। তবে বিতর্কে যতই জড়ান না কেন, সাফল্য তাঁর পিছু ছাড়েনি।