আন্তর্জাতিক
ভালো কাজ করলেই এই হোটেলে মিলবে বিনামূল্যে এক বেলার খাবার!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজ বা পারফরমেন্সের জন্য অনেক সময়ই কর্মীদের পুরস্কৃত করে থাকে অফিস কতৃপক্ষ। আবার সমাজে ভালো কাজের জন্যও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক পুরস্কার আছে। কিন্তু, ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে একবেলা বিনা পয়সায় পেট ভরে খাবারের কথা শুনেছেন কখনও? একবেলা পেট ভরে খেতে চাইলে কোনও সমস্যা নেই। চলে আসুন ‘ভালো কাজের হোটেলে’। তবে এই হোটেলে বিনা পয়সায় খাবার খেতে চাইলে মানতে হবে একটাই শর্ত। সেটা হল, আপনাকে কোনও একটা ভালো কাজ করতেই হবে। সেই শর্ত পূরণ না করতে পারলেও বিনা পয়সায় খাবার মিলবে। কিন্তু তার জন্য পরের দিন আপনাকে যে কোনও দু’টো ভালো কাজ করতেই হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে নয়, এই আজব হোটেল রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকায়। ঢাকা শহরের তেজগঞ্জের সাত রাস্তার মোড়েই রয়েছে এই ‘ভালো কাজের হোটেল’। অন্যান্য সাধারণ হোটেলের সঙ্গে এই হোটেলের পার্থক্য হল, এই হোটেলে খাবারের কোনও বিল হয় না এবং খাওয়ার জন্য চেয়ার-টেবিল নেই। ফুটপাতে বসেই পাত পেড়ে খেতে হয়। ওই হোটেলে খাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুপুর আড়াইটের সময় খাবার দেওয়া হয়। বহু মানুষ ভিড় জমান।
‘ভালো কাজের হোটেল’ টি চালায় ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাঁরা প্রতিদিন খেতে আসেন, তাঁদের কোনও না কোনও একটা ভালো কাজ করার কথা জানাতেই হয়। সে কোনও বৃদ্ধ বা অসহায় মানুষকে রাস্তা পার করে দেওয়াই হোক বা অন্য যে কোনও ভালো কাজ। ওই দিন ওই ব্যক্তি কী ভালো কাজ করেছেন সেটা জানালেই দেওয়া হয় বিনামূল্যে খাবার। তবে সেদিন যদি তিনি কোনও ভালো কাজ করে নাও থাকেন, তাহলেও তাঁকে খাবার দেওয়া হয়। তবে পরের দিন তাঁকে দু’টো ভালো কাজ করে দেখাতেই হবে। ওই সংগঠনের এক স্বেচ্ছাসেবক রুবেল আহমেদ হিমেল জানিয়েছেন, যারা দুবেলা খাবার জোগাতে পারেন না, সেই সমস্ত অসহায়, সম্বলহীন, দরিদ্র মানুষ এবং পথ শিশুদের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার জন্যই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
‘ভালো কাজের হোটেল’ এর অন্যতম সদস্য আরিফুর রহমান জানাচ্ছিলেন, এই হোটেল শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। তিনি ছোটবেলায় ‘সবুজ ছায়া’ নামে একটি নাটক দেখেছিলেন। সেই নাটকের একটি চরিত্র প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করত। আর সেটাই তাঁকে এই ‘ভালো কাজের হোটেল’ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তারপরই আরিফুর ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে এই হোটেল শুরু করেন। এবং ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁদের এই উদ্যোগ। তাই বর্তমানে শুধু তেজগঞ্জেই নয়, বনানী, কমলাপুরেও হোটেলের শাখা খোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম স্টেশনের কাছে আরও একটি শাখা খুব শীঘ্রই চালু হতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সমস্ত শাখার জন্য রান্না হয় একটা জায়গাতেই। সেখান থেকেই বিভিন্ন শাখায় খাবার চলে যায়। এবং অসহায় মানুষগুলোর মুখে খাবার তুলে দেওয়া হয়। পেট ভরা খাবার খেয়ে সেই মানুষগুলোর মুখের হাসিই তাঁদের তৃপ্তি দেয়।
প্রতিদিন এত মানুষকে বিনা পয়সায় খাওয়ানোর জন্য টাকা কোথা থেকে আসে, সে কথাও জানিয়েছেন আরিফুর। তাঁদের সংগঠনের মোট দেড় হাজার সদস্যের থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওঠে সাড়ে চার লক্ষ টাকা। এছাড়াও এই মহৎ উদ্যোগের জন্য অনেকেই অনুদানও দিয়ে থাকেন। এছাড়াও চট্টগ্রামে যে সমস্ত হোটেল রয়েছে, তারাও প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দেয়। তাই দিয়েই অসহায় মানুষদের মুখে প্রতিদিন তুলে দেওয়া হয় খাবার।