বাংলার খবর
ত্রিপুরায় গিয়ে তৃণমূলে ফিরলেন ‘লজ্জিত ও অনুতপ্ত’ রাজীব বন্দ্যোপাধায়
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিত শাহ’র পাঠানো বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি গিয়ে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক। ঠিক ৯ মাস পর ত্রিপুরায় গিয়ে আগরতলার জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরলেন তিনি।
গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েই বেসুরো হয়ে উঠে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল। তাঁকে দলীয় কোনও সভাতেই আর দেখা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করছিলেন। এমনকি ভবানীপুর উপনির্বাচনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী দেওয়ারও তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। জল্পনা শুরু হয় তখন থেকেই। অবশেষে আজ আগরতলার জনসভায় তৃণমূলে যোগ দিয়ে সেই জল্পনার অবসান ঘটালেন। যদিও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মমতা প্রীতি’ নতুন নয়।
যখন তিনি তৃণমূল ত্যাগ করে বিধানসভা থেকে বেড়িয়েছিলেন তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে কেঁদে বলেছিলেন, তিনি সারা জীবন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান করবেন। এর মাধ্যমেই তিনি তৃণমূলে ফেরার রাস্তা তৈরি করে রেখেছিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রীতিমতো ক্ষমা চেয়ে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত বলেই তৃণমূলে ফিরলেন তিনি। তৃণমূলে ফিরে রাজীব বলেছেন, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপিতে নেওয়া হয়েছিল। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি তৃণমূলেরকর্মীদের যে আঘাত দিয়েছিলেন, তার জন্য তিনি অনুতপ্ত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বলেছেন, ‘আজকে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যিনি আবার আমায় ঘরে ফেরানোর অনুমতি দিয়েছেন। আমি প্রণাম ও সম্মান জানাই নেত্রীকে। আমি ভুল করেছিলাম। স্বীকার করছি আমি ভুল করেছিলাম। একটা অভিমানে, জেদ ও রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেদিনও আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানা করেছিলেন। তাই আজ বলতে দ্বিধা নেই। অভিষেক আমাকে আধঘণ্টা ধরে বুঝিয়েছিলেন। আমি লজ্জিত এবং অনুতপ্ত। আমি ভুল স্বীকার করছি। সেদিন যদি অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনে থাকতাম, তাহলে নিশ্চিত ভাবে ভাল দিশা দেখতে পেতাম। আমি সত্যি অনুতপ্ত। ভুল স্বীকার করে নেওয়া অন্যায় নয়।
আমাকে তখন ভুল বোঝানো হয়েছিল।তখনও বলেছিলাম মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তখন আমাকেও স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে ভারতীয় জনতা পার্টি করবেন। নানারকম কথা বলা হয়েছিল। আমি সত্যি যখন দলে ঢুকেছি দলে তখন অনেক উন্নয়ন, শিল্পের কথা বলা হয়েছিল। আমি যে ভুল করেছি, চাই না ভারতবর্ষের মানুষ ওই ভুলটা আর করুক। আর যেন কেউ ভারতীয় জনতা পার্টি না করেন, সেটা বলার জন্যই মঞ্চে মাইকটা নিয়েছি। সবকা সাথ সবকা বিকাশের কথা বলা হয়েছিল। আজ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাহস থাকলে বুকে হাত দিয়ে বলুন, আমি বলেছিলাম দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে।
পেট্রোল ও ডিজেল ও গ্যাসের দাম কমাতে হবে। খালি বলেছিল হচ্ছে, হবে…।’ এদিন ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্বকেও আক্রমণ করে রাজীব বলেন, ‘এত ভয় কিসের? ভয় কখন হয়, যখন গদি টলমল হয়। আজ গদি টলমল হয়ে গিয়েছে। তাই এত ভয় পাচ্ছে। বাইরে কতলোক, তাদের ঢুকতে দেয়নি। গাড়ি দিচ্ছে না। ভয় দেখিয়ে আটকে দিচ্ছে। ত্রিপুরায় যাঁরা পরিবর্তন নিয়ে আসবেন তাঁরা হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানাই।’