বাংলার খবর
শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি কলকাতা হাইকোর্টের, মেলার নজরদারিতে তিন সদস্যের কমিটি
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : রাজ্যে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে লাগাম টানতে গত ৩ জানুয়ারি থেকেই রাজ্যে শুরু হয়েছে করোনার কঠোর বিধি নিষেধ। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ নিয়ে রাজ্য সরকার কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় ব্যাপারটি গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হচ্ছে না। শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মেলার ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং কোভিড বিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তার নজরদারির জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই কমিটিতে থাকবেন বিরোধী দলনেতা বা তাঁর প্রতিনিধি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে, ওই কমিটির সদস্যেরা মেলা শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত পরিদর্শন করবেন। তাঁরা মনে করলে মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পারেন। রাজ্যের উদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গঙ্গাসাগর মেলা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে বলেই মতামত প্রকাশ করে আসছে রাজ্যের চিকিৎসক মহল। তাই মেলা বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন চিকিৎসক অভিনন্দন মন্ডল। শুক্রবার ছিল সেই মামলার শুনানি।
শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও মামলাকারীদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয় এইভাবে কোনমতেই সংক্রমণকে ঠেকানো সম্ভব হবে না। মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘দু-তিনজন সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় যদি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব স্থগিত করে দেওয়া হয়, তাহলে গঙ্গাসাগর মেলা কেন বন্ধ করা হবে না!’ তারপরই আদালত শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের পক্ষ থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল, গঙ্গাসাগর মেলা আইন অনুসারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাগরদ্বীপের মেলা এলাকা চিহ্নিত করতে হবে রাজ্যকে। গত ২ জানুয়ারি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে যে করোনার কঠোর বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল, মেলা চলাকালীন তা নিশ্চিত করতে হবে স্বরাষ্ট্র সচিবকে।
২ জানুয়ারি ওই বিধি-নিষেধে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোনও সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক এবং বিবাহ অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি কেউ হাজির থাকতে পারবেন না। আদালত এই বিধিকেই নিশ্চিত করার কথা বলেছে। ৮ থেকে ১৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলায় গেলে কী কী ঝুঁকি রয়েছে, বা কোন কোন বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, তা রাজ্যের দৈনিক সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে স্বরাষ্ট্র সচিবকে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পুণ্যার্থীদের গঙ্গাসাগর মেলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। মেলার উপর নজরদারি করবেন বিরোধী দলনেতা বা তাঁর প্রতিনিধি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা তাঁর প্রতিনিধি এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। পরিস্থিতি বুঝে যেকোন সময়ে ওই কমিটি মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে রাজ্য সরকারকে। সেই নির্দেশ মতো তৎক্ষণাৎ দ্বীপ খালি করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। ওই কমিটির সঙ্গে রাজ্যের সমন্বয় করবেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সচিব।