বাংলার খবর
কেন্দ্রের পেট্রোল-ডিজেলের দাম ছাড়ে রাজ্যের ১১৪১ কোটি রাজস্ব ক্ষতি, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: পেট্রোল-ডিজেল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আবারও আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্র। তাই জ্বালানির উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য রাজ্য সরকারের উপর ক্রমশ চাপ দিয়ে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক হ্রাস নিয়ে রাজ্যের অবস্থান তুলে ধরে কেন্দ্রকেই পাল্টা নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্ন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ও ডিজেলের উপর থেকে সেস ওঠায়নি। চালাকি করে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় রাজ্যের লোকসান হচ্ছে। কেন্দ্র যে কর ছাড় দিয়েছে, তাতে রাজ্যেরও ভাগ রয়েছে। এর ফলে রাজ্যের মোট ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন পেট্রোল লিটার প্রতি ৮ টাকা ও ডিজেলে ৬ টাকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শুল্ক কমানোর কথা ঘোষণা করেন। ফলে দেশে পেট্রোলের দাম লিটার পিছু সাড়ে ৯ টাকা এবং ডিজেলের দাম লিটার কিছু ৭ টাকা কমেছে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর দাবি করেছেন, পেট্রোলে যে ৮ টাকা কমানো হয়েছে তাতে রাজ্যের কর কমেছে ২টাকা ৮০ পয়সা। এরমধ্যে সেন্ট্রাল ট্যাক্সের কারণে এমনই কমে গিয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। বাকি এক টাকা রাজ্যের দেওয়া ভর্তুকি রয়েছে। ফলে রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে ২৭৩.৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিজেলে রাজ্যের কর কমেছে ২টাকা তিন পয়সা। এরমধ্যে সেন্ট্রাল ট্যাক্সের জন্য কমেছে এক টাকা ৩ পয়সা এবং রাজ্যের ভর্তুকি বাবদ কমেছে এক টাকা। ফলে ডিজেলের জন্য রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে ৩৬৮.৩৭ কোটি টাকা। এই দুই মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৬৪১.৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এবং রাজ্যের এক টাকা ভর্তুকির জন্য সেস বাবদ আরও ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পেট্রোল ও ডিজেলে কেন্দ্র যে কর ছাড় দিয়েছে তাতে রাজ্যেরও ভাগ রয়েছে। কেন্দ্র লোকের টাকা লুট করছে। আমাদের পকেট কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। একেতো রাজ্যের হাতে টাকা নেই। তার মধ্যে রোজই ঝড়ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন হয়েই চলেছে। এদিকে বাংলা সেসের টাকা পায় না। তার উপর আমরা পেট্রোল-ডিজেলের এক টাকা করে ভর্তুকি দিই। তাতেই আরও ৫০০ কোটি টাকা হয়ে গেল। এর ফলে রাজ্যের কোষাগার থেকে উল্টে এক হাজার ১৪১ কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের রাজস্ব আয় থেকেই বেরিয়ে গেল। এই সহজ কথাগুলো ওরা বলে না। অথচ মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’
রাজ্যের ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি গত ৮ বছরে পেট্রোল ও ডিজেল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা লাভ করেছে তাও এদিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ৮ বছরে কেন্দ্র পেট্রোল ও ডিজেল থেকে ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা আয় করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষকে লুট করছে কেন্দ্র। আমাদের পকেট কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোল ও ডিজেলের শুল্ক বাবদ কেন্দ্রের আয় হয়েছে ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে কলকাতায় পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৭১ টাকা ৫১ পয়সা। ২০২২ সালে শুল্ক ছাড় দিয়ে দাম হয়েছে ১০৬ টাকা ৩ পয়সা। নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার আগে বিশ্ববাজারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মোদি আসার পর দাম কমলেও দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে। কেন্দ্র আমাদের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। বিরোধী রাজ্যগুলোকে বঞ্চিত করে তুঘলকি শাসন চালাচ্ছে। সব ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। অয়েল সেক্টরগুলো যখন খুশি দাম বাড়াচ্ছে। আমাদের এখানে বলা হচ্ছে আমরা নাকি দাম কমাইনি। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো কেন্দ্রের কাছ থেকে কত টাকা পায়, আর আমরা কত টাকা পাই? আমাদের পাওনাই তো দেওয়া হয় না। কেরল ২.৪১ টাকা, মহারাষ্ট্র ২.০৮ টাকা, রাজস্থান ২.৪৮ টাকা দাম কমিয়েছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে বেশি ২.৮০ টাকা কমেছে। তারপরও বড় বড় কথা বলছে। ওরা চালাকি করে সেস না উঠিয়ে সেন্ট্রাল ট্যাক্স কমিয়েছে। এর ফলে আমাদেরই সবথেকে বেশি লোকসান হয়েছে।’