বাংলার খবর
ময়নাগড়ের ঐতিহ্যবাহী রাসে আজও কুলদেবতাকে নিয়ে হয় নৌকাযাত্রা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ময়নাগড়ের রাসযাত্রা এ বছর ৪৬১ বর্ষে পদার্পণ করল। এই রাসমেলা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম মেলা। এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ কার্তিক পূর্ণিমার মধ্যরাতে রাজপরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউকে নিয়ে নৌকাযাত্রা।
হাজার হাজার মানুষ ঐদিন রাসযাত্রা দর্শন করে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। কালিদহ ও মাকড়দহ দিয়ে ঘেরা ময়নাগড়ের রাজপরিবারের গোবর্ধন বাহুবলীন্দ্র ১৫৬১ সালে কালীদহের তীরে কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউ মন্দিরে প্রথম রাসমেলা শুরু করেন। সেই থেকে বাহুবলীন্দ্র পরিবারের উদ্যোগে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ১৯৭০ সাল থেকে স্থানীয় মেলা কমিটির উদ্যোগে মেলা হয়ে আসছে। ২০১২ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে গঠিত হয় ময়না রাস মেলা কমিটি। বর্তমান বছরে ময়না রাস মেলা কমিটির কার্যকরি সভাপতি অশোকা নন্দ বাহুবলীন্দ্র ও সহ সভাপতি সিদ্ধার্থ বাহুবলীন্দ্র জানিয়েছেন, করোনা আবহের কারণে প্রশাসন ও ময়না রাস কমিটি ময়নার রাস উৎসবের রাস মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে পরম্পরা ও ধর্মীয় আচার অনুযায়ী কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের উত্থান একাদশীতে ১৬ নভেম্বর থেকে অর্থাৎ আজ থেকে পরপর আট দিন শ্যামসুন্দর জিউ রাজবাড়ীর মূল মন্দির থেকে নৌকা বিহারে কালীদহের ৫০০ মিটার লাবণ্যময় জল পরিক্রমণ করে ময়না রাস মন্দিরে প্রবেশ করবে। কেবল মাত্র পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যা ৬ টার সময় রাজবাড়ীর কুল দেবতা শ্যাম সুন্দর জিউ ফিরে যাবেন মূল মন্দিরে। শেষ রাস যাত্রা ২৩ নভেম্বর। ওই দিন বিকাল তিনটের সময় ঢাক-ঢোল, কীর্তন, আতশবাজি, বাতাসা লুট সহযোগে রাস মন্দির থেকে নৌকা বিহারে রাজবাড়ীর মূল মন্দিরে প্রত্যাবর্তন হবে। রাসযাত্রা হলেও রাসমেলা না হওয়ায় হতাশ স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাসপ্রেমী সকল মানুষ।
রাজপরিবারের কুল পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় পাঠকও হতাশা। তিনি বলছিলেন, রাসমেলা হলে ভক্ত সমাগমে যা অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়েই বছরের সংসার খরচ চলে। রাস মেলার সামনে স্থানীয় এক মিষ্টি ও কদমা দোকানির গলাতেও হতাশার ছবিটা স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, ‘অন্যান্য বছর ২০০ বস্তা চিনি প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত বছর মাত্র ৫০ বস্তা চিনি লেগেছে। এই রাসে দোকানে ৫০ কর্মচারী লাগে। সেখানে এ বছর মাত্র ১২ জন কর্মচারী কাজ করছে। এলাকার মানুষ-জন সারা বছর এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন।’