বাংলার খবর
মনের ইচ্ছার কাছে তুচ্ছ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চাই ঈশিতা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: জন্ম থেকে মূক বধির। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুর গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা মণ্ডল (Ishita Mandal)।মুখে নেই ভাষা, জন্ম থেকেই বধির। মানুষের মুখে উচ্চারিত কোনও শব্দ শোনার সৌভাগ্যও হয়নি তাঁর। মনের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না কাউকে। মানুষের মুখের ইশারা দেখেই অনেক কষ্টে সবকিছু বুঝতে হয় তাঁকে।
তবে জন্মগত এই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চায় ঈশিতা মণ্ডল। কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুর গ্রামের লালমোহন মণ্ডলের মেয়ে ঈশিতা মণ্ডল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। জন্ম থেকেই সে মূক ও বধির। পরিবারের সেরকম আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। যারফলে খুবই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন যাপন করতে হয় তাঁদের।
জানা গিয়েছে, বাবা লালমোহন মণ্ডল পেশায় কাঁথি পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার লালমোহনবাবুর। মেয়ের জন্মের পর লালমোহন বাবু যখন জানতে পারেন, মেয়ে শ্রবণ শক্তি ও বাক শক্তি হারিয়েছে। তখন থেকেই লালমোহন বাবুর জীবনে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। মেয়েকে (Ishita Mandal) বাক শক্তি ও শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন ভিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা চিকিৎসকদের কাছে।
কিন্তু শেষমেষ সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাঁর। সমন্ত চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন মেয়ে চিরতরে বাক শক্তি হারিয়ে বধির হয়ে গিয়েছে চিকিৎসকদের কথা শুনে প্রথমে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন লালমোহন মণ্ডল। নিজের মনকে শক্ত করে মেয়েকে পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাতে থাকেন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন, দেশে ফিরেও আতঙ্ক কাটছে না সৌরভদের
জন্মগত ভাবে মূক ও বধির শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা। এই কারণে তাঁদের শিক্ষাদান পদ্ধতিও আলাদা।প্রাথমিক শিক্ষা মূক ও বধির স্কুলে নিলেও পরে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁথির চন্দ্রামনি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন শুরু করে ঈশিতা। স্কুলের শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে ঈশিতা (Ishita Mandal) আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সাধারণ ছাত্রীদের মতোন আজ সেও জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসেছে।
মূক বধির ছাত্রী ঈশিতা মণ্ডলের বাবা লালমোহন মণ্ডল বলেন, ”জন্ম থেকেই মূক বধির ছোট শিশু যখন দোলনায় ঘুমাতো তখন থেকেই জানতাম ও কোনওদিন কথা বলতে পারবে না।”
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ”পঞ্চম শ্রেণি থেকে সাধারণ ছাত্রীর মতন স্কুলে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনায় খুব ভাল। আগামী দিনে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করব। সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা হয়, তাহলে আমার মেয়েটা উপকৃত হয়।”
আরও পড়ুন: আজ থেকে শুরু মাধ্যমিক পরীক্ষা, পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালের
ঈশিতার মা ছন্দা মণ্ডল বলেন ”সাধরণ ছাত্রীদের মতো মাধমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। পড়াশোনা করতে কষ্ঠ হয়, শুনতে পায় না। তবু মেয়ের অদম্য জেদ।সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো মেয়েটাকে উচ্চশিক্ষিত করতে পারব।”