বাংলার খবর
নাড্ডার হুগলির অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে গোষ্ঠী কোন্দলে জড়ালেন জেলা বিজেপির নেতা-কর্মীরা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বুধবার সকালে হুগলির চুঁচুড়ায় বন্দেমাতারম ভবন পরিদর্শন করেই বাংলা সফর শুরু করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। আর সফরের শুরুতেই তাল কাটল। কেন্দ্রের শীর্ষনেতার সামনেই কোন্দলে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপি কর্মীরা!
বুধবার বেলা বারোটা নাগাদ জেপি নাড্ডার কনভয় এসে উপস্থিত হয় চুঁচুড়ার জোড়াঘাটে। ঠিক তার আগেই বন্দেমাতরম ভবনের সামনে দেখা যায় হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় উত্তেজিত হয়ে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে কিছু বলছেন। আঙুল তুলে রিতীমত ধমকাচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা স্বপন পাল, সুবীর নাগ ও হুগলি জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার। দীপাঞ্জন গুহ কিছু যতই কিছু বলার চেষ্টা করছেন, ততই আঙুল তুলে তাঁকে শাসিয়ে যাচ্ছেন সাংসদ। এর মধ্যেই জেপি নাড্ডা চলে আসায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মিনিট পনেরো থাকার পর চুঁচুড়া থেকে চন্দননগরে রাসবিহারী বসু ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে চলে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। সেখানেও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বচসা থেকে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। আর তাতে শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বিজেপি এক কর্মী আহত হন।
চুঁচুড়া এবং চন্দননগরে অনেক বিজেপি কার্যকর্তা জেপি নাড্ডার অনুষ্ঠানে ঢুকতে না পেরে দীপাঞ্জন গুহকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপি সূত্রে খবর, তাঁর উপরই দায়িত্ব ছিল জেপি নাড্ডার অনুষ্ঠানের।সেখানে কে কে থাকবেন, তার তালিকা ঠিক করা হয়।কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে দেখা যায় সুবীর নাগ ও তাঁর অনুগামীরা সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। সুবীর নাগ হুগলি জেলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি। বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না দেওয়ার লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। নির্বাচনে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে কোনও কর্মসূচীতে দেখাও যায়নি তাঁকে। সুবীর তৃণমূলে যোগ দেবেন বলেও খবর রটে। তবে এখনও তিনি বিজেপিতে থাকলেও কোনও পদে তাঁকে রাখেনি দল। লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সুনজরেও নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। অথচ অনুগামীদের নিয়ে বন্দেমাতরম ভবনে সকাল থেকেই হাজির হন সুবীর নাগ। নাড্ডার সঙ্গেও তাঁকে দেখা যায়। নাড্ডাকে আম উপহার দেন সুবীর। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
দীপাঞ্জন গুহ কেন এগুলো দেখেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নেতৃত্ব। হুগলির সাংসদ তো জন সমক্ষে দীপাঞ্জন গুহকে কড়া হুশিয়ারী দেন। চুঁচুড়ায় যেটা তর্কাতর্কিতে সীমাবদ্ধ ছিল চন্দননগরে সেটাই বচসা থেকে মারামারিতে পরিণত হয়। যদিও এবিষয়ে বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। লকেট বা দীপাঞ্জন কেউই মুখ খোলেননি। সুবীর নাগ বলেন, ‘আমি রাজ্য কমিটির সদস্য। রাজ্য থেকে আমাকে বলা হয়েছিল। তবে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি এসেছেন, তাই গিয়েছিলাম। সেখানে সাংসদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুষ্ঠানে থাকতে বলেন। জেলা সভাপতিও থাকতে বলেন।আমি সেখানে গিয়েছি বলে কোনও গন্ডগোল হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’ সূত্রের খবর, কাটআউট কম লাগানো নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন সাংসদ।
তৃণমূল চন্দননগর শহর সভাপতি মুন্না আগরওয়াল এই নিয়ে বিজেপি কে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, ‘বিজেপির এটাই সংস্কৃতি। নিজেদের মধ্যে কোন্দল করা। এরা আবার কী করে দেশ চালাচ্ছে, সেটা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।চুঁচুড়া, চন্দননগরে গন্ডগোল হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে।’