বাংলার খবর
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেও মুখ্যমন্ত্রীর গলায় অভিমানের সুর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে জিতেছিল বিজেপি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার সবকটি আসনেই ফুটেছিল পদ্ম। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে দলীয় কর্মী সভার মঞ্চ থেকে বিজেপিকে কার্যত তুলোধনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ভেজাল সরকার বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জালনোট, গোর্খাল্যান্ড, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, উচ্ছেদ নিয়ে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেছেন, ‘আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে বিজেপি জিতেছে। জেতার পর থেকেই উচ্ছেদ করতে শুরু করে দিয়েছে। রেল থেকে শুরু করে বিজেপি এখন সব জায়গায় উচ্ছেদ করছে। যেখানে দেখবেন উচ্ছেদ করছে সেখানেই প্রতিবাদ করবেন। কারণ উচ্ছেদ করার ক্ষমতা ওদের নেই। যে সব মানুষ দীর্ঘদিন ছিল পাট্টা পায়নি তারাও এবার পাট্টা পাবেন। যাঁরা উদ্বাস্তু কলোনি গড়ে তুলেছেন তাঁরা ধীরে ধীরে পাট্টা পেয়ে যাবেন।’ এরপরই নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা নিয়ে কথা বললে বলে মেরে ফেলো। জমি নিয়ে কথা বললে বলে মেরে ফেলো। ধর্মের কথা বললে বলে, আমি যা বলবো সেটাই শুনতে হবে। ওঁ কি আমাদের মাস্টার! আমরা এমন মাস্টার চাইনা। যিনি ভাগ করেন, সবাইকে মারেন।’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ভেজাল সরকার বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘৫০০ টাকার নোটে জালিয়াতি হয়ে গেছে। ২০০০ টাকার নোট জাল হয়েছে। সব ভেজাল তৈরি করেছে। নোটবন্দির সময় মোদি বলেছিলেন দেশের ভালো হবে। জাল টাকা থাকবে না। এখন গোটা বাজারে জাল টাকা ছেড়ে দিয়েছে। আপনি কেন জাল টাকা বাজারে ছেড়ে দিলেন? বলা হয়েছিল নোটবন্দির ফলে সীমান্তে সন্ত্রাস কমবে। কমেছে? বলা হয়েছিল নতুন দু’হাজার টাকার নোটে মাইক্রো চিপ থাকবে। তা দিয়ে জিপিএস ট্র্যাক করে নোটের অবস্থান নাকি বোঝা যাবে। এসব আসলে গেরুয়া শিবিরের হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির সিলেবাস। এখানে বিজেপি লোকসভায় জিতেছে। বিধানসভায় সব জিতে নিয়ে গেছে। গিয়ে কী করেছে? গ্যাসের দাম এক হাজার টাকা করে দিয়েছে। খেতে দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই। আগে বিজেপিকে বলতাম জুমলা সরকার। এখন বলি ভেজাল সরকার।’
উত্তরবঙ্গের জন্য এত কাজ করার পরও মানুষ বিজেপিকে ভোট দেওয়ায় এদিন তৃণমূল নেত্রীর গলা অভিমানের সুরও ঝরে পড়ে। বলেছেন, ‘২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য কিছুই করেনি। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে উত্তরবঙ্গের একাধিক জনজাতির উন্নয়নের জন্য একাধিক পর্ষদ গঠন করেছে।
অনেক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। তাই আমি মনে করিনা উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত। এতকিছু করার পর যখন দেখি বিজেপির মিথ্যে কথায় ফেঁসে আপনারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তখন খারাপ লাগে। বিজেপি ভোটের আগে এসে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভোট মিটলেই সেসব ভুলে যায়। কী করেছে বিজেপি? চা বাগান খোলার কথা বলেছিল, গ্যাস দেওয়ার কথা বলেছিল। কী হয়েছে! উত্তরবঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে বিজেপি। দলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদরা উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি জানিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বন্ধ হওয়া চা বাগান খুলে দেবে। খুলেছে? শুধু শুধু বাংলা ভাগে ইন্ধন দিচ্ছে। কী ভাগ করবে? পাহাড় ভাগ করতে পারবে? গোর্খাদের ভাগ করবে? উল্টে গ্যাসের দাম বাড়ায়, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ায়। কোনও প্রতিশ্রুতিই ওরা পূরণ করতে পারেনি।আমাদের সরকার সব কাজ করে, করবেও।’
গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ টেনেও এদিন বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, ‘ভোটের আগে গোর্খাল্যান্ড করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, ভোটের পর পালিয়ে গিয়েছে। আমরা এটা করতে দেব না। তরাই ডুয়ার্সের সঙ্গে আগে ঝগড়া ছিল। আমরা কোনও ঝগড়া চাই না। সবাই আমার বন্ধু। আমরা বাংলাকে ভাগ হতে দেব না। আমরা মানুষে মানুষে বিভাজন চাই না। আমরা সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই।’