বাংলার খবর
রায়গঞ্জে ২১২ বছর পুরনো আদি করুণাময়ী কালী মন্দিরে আজও পুজো করেন সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরেরা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরেরা দীর্ঘদিন ধরে পুজো করে আসছেন রায়গঞ্জ আদি করুণাময়ী কালী মন্দিরে। অসম থেকে পঞ্জাব, বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ- ভিন রাজ্যগুলোর পাশাপাশি বিদেশ থেকেও দীপাবলীর রাতে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে কালীমাতার পুজো দিতে আসেন ভক্তরা।
রায়গঞ্জ শহরের বন্দরে এই কালীমন্দিরে দীপান্বিতার পুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ভক্তের সমাগমে পূন্যতীর্থ হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ শহর। এবারেও মাস্কের ব্যবহার ও স্যানিটাইজার টানেল করে দর্শণার্থীদের মন্দিরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়ির সেবাইত তথা সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। কথিত আছে, ইংরাজির ১৪৭০ সালে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে পঞ্জাব প্রদেশের এক সাধু পায়ে হেঁটে এসে উপস্থিত হন রায়গঞ্জের কুলিক নদীর বন্দর ঘাটে। ঘাটের কাছেই একটি গাছের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সিদ্ধিলাভ করেন৷ সেই থেকে শুরু হয় এখানে কালীর আরাধনা।
বেদীতেই পুজোর প্রচলন হয়েছিল। ইংরাজির ১৮০৯ সালে অর্থাৎ ১২১৬ বঙ্গাব্দে দিনাজপুরের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই স্থানে নির্মান করেন কালী মন্দির। এরপর তারাপীঠের মহাসাধক বামাক্ষ্যাপার নাতি জানকিনাথ চট্টোপাধ্যায় বারাণসী থেকে কষ্ঠীপাথরের কালীর মূর্তি এনে বসান পঞ্চমুন্ডির আসনে। সেটাও আজ থেকে ২১২ বছর আগের কথা। সেই থেকেই এই একই মূর্তিতে দক্ষিনা কালীমাতার পুজো হয়ে আসছে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই মন্দিরে কালীপুজোর রাতে মায়ের পায়ের নূপুরের ধ্বনি শোনা যায়। তন্ত্রমতে এখানে দেবী পূজিত হন। মাছ ভোগ দেওয়ার পাশাপাশি ছাগ বলির প্রচলন রয়েছে বন্দর আদি করুণাময়ী কালীবাড়িতে। আজও বন্দর আদি করুণাময়ী কালীমন্দিরে বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরেরা।
জাগ্রত এই দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বাংলাদেশ-সহ বিদেশেও। তাই দীপান্বিতার কালীপুজোর রাতে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় রায়গঞ্জের এই বন্দর আদি করুণাময়ী কালীমন্দিরে। সারাবছরই অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয় এই জাগ্রত দেবীর মন্দিরে। ভক্তদের প্রণামী আর দান দিয়েই হয় দীপান্বিতার কালীপুজো। করোনা আবহ থাকায় এবারেও মন্দিরে প্রবেশের জন্য স্যানিটাইজার টানেল ও মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর আদি করুণাময়ী কালীমন্দিরের সেবাইত সাধক বামাক্ষ্যাপার বর্তমান বংশধর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়।