বাংলার খবর
মেলেনা মৃতদেহ সৎকারের শংসাপত্র, পৌর নিগম এলাকায় অরক্ষিত শশ্মান উস্কে দিচ্ছে হাঁসখালির ঘটনা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: হাঁসখালি কান্ড নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য। অভিযোগ, এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে তার দেহ গ্রামের শশ্মান পুড়িয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপার পড়ে গিয়েছে।
ওই ঘটনার তদন্তে উঠে আসে কোনও কাগজ ছাড়াই মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে শশ্মান। এরপর ওই শশ্মান কর্মচারীরা দাবি করেন , সেখানে বিনা কাগজে পোড়ানো যায় মৃতদেহ। যা শুনে চোখ কপালে উঠেছিল রাজ্যবাসীর। হাঁসখালির মতো ঘটনা না ঘটলেও এরকমই এক শশ্মান রয়েছে হাওড়া পৌর নিগম এলাকায়। যেখানে শবদেহ পোড়াতে গেলে লাগে না কোনও সরকারি নথি। লাগে না মৃতের পরিচয় পত্র। এমনকি পুড়িয়ে ফেলার পর দেওয়াও হয় না মৃতের পারলৌকিক ক্রিয়ার নথি। সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে রয়েছে এই শ্মশানটি। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই এই শশ্মান নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
জানা গিয়েছে, এই শশ্মানে মানা হয় না কোনও রেজিস্টার। সারাদিনে বা রাতে ক’টা মৃতদেহ পুড়ল নেই তারও হিসেব। সার্বিকভাবে বলা যায় রাতের অন্ধকারে কেউ মৃতদেহ নিয়ে এসে পুড়িয়ে চলে গেলেও তার কোনও হদিশ পাওয়া যাবে না নগর নিগমের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা দীনেশ বাগ দাবি করেন, ২০১৫ সালের পর তিনি জানতে পারেন এখানে একটি শশ্মান রয়েছে। এই জায়গাটি উনসানী খাল পাড় ১২ নম্বর রেল গেটের পাশে।
তিনি বলেন, ”এখানে লোকেরা মৃতদেহ পোড়ায় কিন্তু পৌর নিগমের শংসাপত্র পাওয়া যায় না। বছরে এক দিন শশ্মান কালীর পুজোর দিন এই শশ্মান তারা পরিষ্কার করেন।” তিনি আরও দাবি করে বলেন, ”এখানে শশ্মান আছে সকলেই জানে কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। তাতে তার সংসারের ক্ষতি হতে পারে এই ভেবে।”
আরও পড়ুন: জোড় করে তোলা আদায়ের অভিযোগ, প্রমীলা বাহিনীর হাতে প্রহৃত ব্যক্তি
তিনি জানান এখানে রাত্রি ১০টা তো কখনও মধ্য রাতেও মৃতদেহ পোড়ানোর কাজ হয়। যদিও ঘটনার কথা জানার পর হাওড়া পৌর নিগমের মুখ্য প্রশাসক দাবি করেন তিনি বিষয়টি তার নির্দিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের জানিয়েছেন। সেই টিম খুব শীঘ্রই এই শশ্মান নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেবেন। তারপরে এই শশ্মান নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
যদিও তার মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা উমেশ রাই জানান, উনি কাজ করছেন বলছেন আর রোজ রোজ একটি করে বিশেষ টিম নামাছেন। আসলে তৃণমূলের বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাঁচ বছরে টাকা পয়সা লুট করতে ব্যস্ত ছিল। তাই এই ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড হাওড়া পৌর নিগমে সংযুক্ত করা হলেও এখানে নগর নিগমের কোনও পরিষেবা নেই। তা শশ্মান হোক বা পরিশ্রুত পানীয় জল বা আলো সবই পঞ্চায়েত এলাকার মতোই। তবু নগর নিগমের মতো করের টাকা গুনতে হয় বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন: পশুখাদ্য মামলায় বড় স্বস্তি! জামিন পেলেন লালু
এদিকে হাঁসখালী কাণ্ডের পরে হাওড়া পৌর নিগমের বুকে এই ধরণের অরক্ষিত শ্মশান চালু থাকাকে ভালো ভাবে নিচ্ছে না এলাকার মানুষ। তারা নিজেরা জানাচ্ছেন পরিবারে কেউ মারা গেলে তারা শিবপুর শশ্মান ঘাটে নিয়ে যান। তাতে মৃতের দাহ করার শংসাপত্র পাওয়া যায়। নাহলে শংসাপত্র ছাড়া মৃতদেহ দাহ হলে সেই ব্যক্তি আইনের চোখে জীবিতই থাকে। এতে পরবর্তীকালে তাদের পরিবারের আইনত সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই বাসিন্দাদের দাবি এই শশ্মানকে পৌর নিগম তাদের তালিকাভুক্ত করুক। যাতে মানুষের সমস্যা মিটাতে সুবিধা হয়। তবে পৌর নিগম এই শশ্মান নিয়ে কত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এখন সেটাই দেখার।