ভাইরাল খবর
রায়গঞ্জ-বারসই সেতুবন্ধন, বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর প্রস্তাবে অনুমোদন মুখ্যমন্ত্রীর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম রায়গঞ্জে প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠককে ঘিরে আগেই সেজে উঠেছিল রায়গঞ্জ। উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন সরকারী আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রায়গঞ্জের কর্ণজোরা অডিটরিয়ামে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই জেলার জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী আধিকারিকরা তাঁদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে রায়গঞ্জবাসীর একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। রায়গঞ্জবাসীর বহুদিনের দাবি, রায়গঞ্জ-বারসই সড়কে নাগর নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কথা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন তিনি। কৃষ্ণ কল্যাণী জানিয়েছেন, বিহার সংলগ্ন শহর রায়গঞ্জ। এই এলাকার বলরামপুর, বারসইয়ের আশেপাশের ৫০-৬০ কিলোমিটারের মধ্যে একমাত্র বড় বাজার হলো রায়গঞ্জ।
মুখ্যমন্ত্রী এই রাস্তাটা আগেই করে দিয়েছেন। কিন্তু ওই সড়কের ওপর একটি ব্রিজ না থাকার কারণে বিহার-সহ বলরামপুর, বারসইয়ের মানুষজনের রায়গঞ্জ বাজারে আসতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই সেতু তৈরি হলে, রায়গঞ্জের অর্থনীতির অনেকটাই উন্নতি হবে। এবং সরকারের ৪.৩৪ শতাংশ রেভিনিউ বাড়বে। এই কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জের বিধায়ককে জিজ্ঞাসা করেন, এই সেতুটি তৈরি করতে কত খরচ পড়বে। তার উত্তরে বিধায়ক জানান, এটি আড়াইশো মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করে জানান, যেহেতু এটা বিহার সংলগ্ন এলাকার একটা সমস্যা, তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে সমস্যার সমাধান করা হবে।
এ ছাড়া কৃষ্ণ কল্যাণী রুগ্ন হয়ে পড়া রায়গঞ্জের কুলিক ডেয়ারিকে পুণরায় আধুনিকীকরণ এবং চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জের বিধায়ক বলেন, ‘কুলিক ডেয়ারি এখন রুগ্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে আমি এসডিও সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। সরকার যদি পিপিপি মডেলে করতে চায় তাহলে বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে তৈরি আছেন। এই প্রকল্পে সরকারের ৪৯ লক্ষ টাকা ইন্সেন্টিভ বাকি আছে। ওটা যদি সরকার দিয়ে দেয় এবং বাকি টাকাটা বিনিয়োগকারীরা দিলে, সংস্থাটিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।’ তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এই সংস্থাটিকে বাংলার ডেয়ারিতে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বাংলার ডেয়ারি করছি। আগে আমরা দেখে নিই কতটা করতে পারি। পিপিপি মডেলে যদি কোনও বিনিয়োগকারী রাজি হন, তাহলে তো সরকারের টাকাটা বাঁচবে। আপনার প্রস্তাবটা লিখিত আকারে আমাদেরকে পাঠান।’ এই প্রসঙ্গে প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি বলেন, ‘কুলিক ডিয়ারি দু’বছর আগে অবধি ভালো কাজ করতো। দিনে এক হাজার ৫০০ কেজি আমরা এখান থেকে সংগ্রহ করতাম। পঁচিশটা ফারমার্স সোসাইটি ছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে কিছু আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটাকে পুনরুজ্জীবিত করতে আপনি যেভাবে বলেছেন আমরা বাংলা ডেয়ারির আওতায় আনছি।’ এ ছাড়া উত্তর দিনাজপুরে ‘ব্রোকেন রাইস’ এর মতো কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় ইথানল তৈরিতে সরকারি সহযোগিতার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী।
মঙ্গলবারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার ১৫টি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ২৩টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। সড়ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিদ্যুৎ, ইংলিশ মিডিয়াম মডেল স্কুল, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, জল প্রকল্প, সেতু এবং মেডিসিন স্টোরের মতো একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। রাস্তা ও সেতু নির্মাণে কয়েক কোটি টাকা খরচ করা হবে বলেও বৈঠক থেকে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের সমস্ত বাড়িতেই পানীয় জল অর্থাৎ পাইপ লাইন ওয়াটার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার যে ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কর্মতীর্থ, পথসাথী, জলস্বপ্নের মতো সমস্ত সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান সাধারণ মানুষের সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরার জন্য সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা, জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন দক্ষিণ দিনাজপুরে মোট ১৩৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
১০০ দিনের কাজ, লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প নিয়েও দুই জেলার আধিকারিকদের থেকে খোঁজ নেন। মৎস্যজীবী এবং শিল্পীদের সহযোগিতার জন্য ‘মৎস্যজীবী কার্ড’ এবং ‘আর্টিসন কার্ড’ চালু হয়েছে বলেও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানুয়ারি মাসে দুয়ারে সরকারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে। ১-১০ এবং ২০-৩০ জানুয়ারি দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতবারের এই দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে তিন কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও কালিয়াগঞ্জে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং উত্তর দিনাজপুরে একটি টেক্সটাইল পার্ক তৈরি হচ্ছে বলেও এদিনের বৈঠক থেকে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।