বাংলার খবর
স্নাতকোত্তর ছাত্রীর গবেষণাপত্রের বিষয় ‘চপশিল্প’! রাজ্য জুড়ে শোরগোল

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ছাঁকা তেলে ভাজা চপ। তা সে আলুরই হোক বা মাংসের, সন্ধ্যেবেলা চপের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে আমজনতার। আর তার সঙ্গে একটু মুড়ি থাকলে তা ষোলোকলা পূর্ণ। আজ রাস্তার মোড়ের সেই চপ সেন্টারের চপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। কখনও জীবন-জীবিকার মূলে কখনও আবার ভিভিআইপিদের শ্লেষবাক্যে চপের ছড়াছড়ি।
আর এবারে একেবারে উচ্চশিক্ষার গবেষণাপত্রের বিষয় হয়ে উঠেছে সেই ছাঁকা তেলে ভাজা চপ। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই বাস্তবে দেখা গিয়েছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ তাপস পালের অধীনে স্নাতকোত্তর স্তরের চতুর্থ সেমিস্টারের এক ছাত্রীর গবেষণাপত্রের বিষয় ‘চপশিল্প’। যার শিরোনামটিও বেশ চমকপ্রদ। শিরোনামে লেখা রয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের চপশিল্প ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষনায় চপশিল্প।’ অনেকেই এর তাৎপর্য খুঁজছেন। এরই মধ্যে গবেষণার এই বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা, চুলচেড়া বিশ্লষণ।
জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের স্নাতকোত্তরের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রী কণা সরকার ‘আর্বান জিওগ্রাফি’ বিষয়ে চপশিল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে ওই ছাত্রীর থেকেও এই গবেষণাপত্রে সবথেকে বেশি অবদান রয়েছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক ডঃ তাপস পালের। কারণ চপশিল্প নিয়ে গবেষণা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি জানিয়েছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছে। বেড়ে গিয়েছে দারিদ্রতা। এই পরিস্থিতিতে অসংগঠিত ক্ষুদ্র বানিজ্যগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় চপ শিল্পের কথা বলেছিলেন। এই ক্ষুদ্র খাদ্যশিল্প মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হলেও এর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নেই। তাই এই বিষয়টিতে ফোকাস করে রাজ্য তথা জেলার মানচিত্রে চপ শিল্পের পরিসর নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়।
যদিও গবেষণাপত্রে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম তুলে ধরায় কিছুটা হলেও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর অন্দরে শ্লেষাত্মক বিষয় খোঁজারও চেষ্টা করছেন। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডঃ তাপস পাল বলেছেন, ‘এই নিয়ে কণাকে অনেকেই কটাক্ষ করছেন। ওর কোনও দোষ নেই। আমিই ওকে এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করতে বলেছি। চপ বিক্রি করে একটা পরিবার এবং সমাজের কোনও উন্নতি হয় কিনা এই নিয়েই গবেষণা করা হয়েছে। চক বিক্রির সঙ্গে মহিলারা কতটা যুক্ত রয়েছেন, এবং এই শিল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কতটা লাভ হয় তারই সমীক্ষা করা হয়েছে মালদহর গাজলের বিভিন্ন এলাকায়। তাতে দেখা গিয়েছে, চপ বিক্রি করে মহিলাদের মাসে রোজগার হয় ৯ হাজার টাকার মতো। আর পুরুষদের রোজগার হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।’
কেএফসি-ও তো চপ বিক্রি করেহয। তাহলে গবেষণাপত্রের বিষয়ে যদি চপশিল্প হয় তাহলে আপত্তি কোথায়? এই প্রশ্নও তুলেছেন অধ্যাপক তাপস পাল। তিনি বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে ফুড ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। KFC যা বিক্রি করে সেটাও চপ। সেটা নিয়ে তো সমালোচনা হচ্ছে না। তাহলে প্রান্তিক এলাকায় যাঁরা চপ বিক্রি করছেন, তাঁদের নিয়ে গবেষণা করলেই কেন সমালোচনা হচ্ছে। আমি একজন অধ্যাপক। তাই এটা নিয়েই আমার গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কপিটি জমা দেওয়া হয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রী অনুপ্রেরণায় কথাটি লেখা নেই। পার্সোনাল কপিতে যা কিছু লেখা যেতে পারে। আর মনে রাখতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, বানিজ্য ও আইন বিভাগের ডিন দীপক কুমার রায় বলেছেন, বিষয়টি বিশদে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে শিরোনামে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করলেই বাঞ্ছনীয় হত বলেই মত তাঁর। বিতর্ক, গুঞ্জন, সমালোচনা যাই হোক, গবেষণার মুখ্য বিষয়বস্তুই হোক, এতে চপ শিল্পের ভাগ্য বদলাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে যথেষ্ট।