বাংলার খবর
বগটুইয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক দল,বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোর মধ্যে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (CFSL)। বগটুই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জোড়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বুধবারের এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সিএফএসএল-এর প্রতিনিধিদের দ্রুত নমুনা সংগ্রহেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবি উঠলেও রাজ্য সরকার গঠিত সিট-কেই তদন্ত চালানোর সম্মতি দিয়েছে আদালত।
গোটা ঘটনার তদন্তে এডিজি সিআইডি জ্ঞানবন্ত সিঙের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার গঠিত তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোর মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে আদালত। একইসঙ্গে তথ্য ও নথি যাতে নষ্ট না হয় সেই জন্য পূর্ব বর্ধমানের জেলা বিচারকের তত্বাবধানে ঘটনাস্থলের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফুটেজ বেশি রাখতে ডিভিআর-এর (DVR) ব্যবহার, যাতে সব অ্যাঙ্গেল ধরা পরে এবং সব সময় রেকর্ডিং করার ব্যাবস্থা করতে হবে। যত দিন না পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ততদিন এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে আদালত। রাজ্য পুলিশের ডিজি ও পূর্ব বর্ধমানের জেলা জজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাক্ষীদের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত। অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহগুলোর পোস্টমর্টেম হয়ে থাকলে তার ভিডিও ও রিপোর্টও জমা দিতে হবে। যদি না হয় তাও জানাতে হবে। সেইসঙ্গে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্টও আনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডে রাজ্যপালকে কড়া চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর
এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকার গঠিত সিট-এর তিন সদস্যকে নিয়ে আপত্তি তোলেন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী। মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরোজ এদুলজি বুধবার আদালতকে বলেন, ‘রিজওয়ানুর রহমান হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী জ্ঞানবন্ত সিং। তাঁকে সাত বছর সার্ভিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিট-এর আরেক সদস্য আইপিএস সঞ্জয় সিং-কে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারার জন্য সরিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাই সঠিক তদন্ত হবে কি না, সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
মামলাকারীদের আরেক আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ডিজি বলেছেন এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। অথচ শাসক দলের নেতারাই অন্য কথা বলছেন। তাই রাজ্যের পুলিশ দিয়ে কোনও তদন্ত সম্ভব নয়।’ মামলাকারীর অপর আইনজীবী তথা বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালও সিট-এ জ্ঞানবন্ত সিঙের থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আনিস খান হত্যা মামলায় রাজ্য সরকার যে সিট গঠন করেছে তার সদস্য জ্ঞানবন্ত সিং। আবার ওই একই অফিসার রামপুরহাট কাণ্ডের সিট-এর সদস্য। একজন পুলিশ অফিসারের ওপরেই রাজ্য কেন এত আস্থা দেখাচ্ছে! এলাকার মানুষ বলছেন রাজনৈতিক রেষারেষিতে এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ডিজি কী করে বলে দিলেন এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই?’
তার জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতকে জানান, রাজ্য সরকার গঠিত সিট ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং রাজ্যের ফরেনসিক দল নমুনা সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে। সেইসঙ্গে আদালতকে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি সমস্ত এলাকাবাসী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারেও আদালতকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সিট প্রমাণ নষ্ট করতে পারে আশঙ্কা মহম্মদ সেলিমের
গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দল সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে এদিন আদালতের কাছে এজি জানান একদিনের সুনানির ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া ঠিক হবে না। সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রের সহকারি সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চান, কেন্দ্রের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে কিনা। কেন্দ্রের সহকারী সলিসিটর জেনারেল তাতে সম্মতি জানান।