মহানগর
হাঁসখালি ঘটনায় উল্টে বিপাকে বিজেপি, হাইকোর্টে জোড়া জনস্বার্থ মামলা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: নদীয়ার হাঁসখালিতে গণধর্ষণ এবং মৃত্যুর ঘটনায় বড়সড় বিপাকে পড়ল বিজেপি। এই ঘটনায় নির্যাতিতা ওই নাবালিকার নাম প্রকাশ্যে আনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা উত্তরপ্রদেশের সাংসদ রেখা বর্মার বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা রুজু হল কলকাতা হাইকোর্টে। এছাড়াও হাঁসখালি কাণ্ডে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে পৃথক একটি মামলা।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলা দু’টি দায়ের করেছেন অনিন্দ্য সুন্দর দাস নামে এক আইনজীবী। হাঁসখালির ঘটনায় রেখা বর্মা, তামিলনাড়ুর বিজেপি বিধায়ক ভানাথি শ্রীনিবাসন, তামিল অভিনেত্রী খুশবু সুন্দর এবং ইংরেজ বাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে নিয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছিল পদ্ম শিবির। কিছুদিন আগেই হাঁসখালিতে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি গোটা ঘটনার খোঁজ খবর নেয় সেই কমিটি। অভিযোগ, গত ১৫ এপ্রিল হাঁসখালিতে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলার সময় রেখা বর্মা নির্যাতিতার নাম বলে দেন। যা নিয়ে সেই সময়ই প্রতিবাদে সরব হন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে শিশু সুরক্ষা কমিশন। এমনকি গোটা ঘটনার জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভুল স্বীকারও করে নেয়।
মামলাকারীর দাবি, ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ধর্ষিতা বা নির্যাতিতার নাম কখনওই প্রকাশ্যে বলা হয় না। এই ঘটনা গুরুতর অপরাধ। পাশাপাশি আরও একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সেই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই যেখানে ইতিমধ্যেই হাঁসখালির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, সেখানে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কীভাবে আলাদা রিপোর্ট তৈরি করে তা জেপি নাড্ডার হাতে তুলে দিচ্ছে! এতে মূল তদন্ত প্রভাবিত হবে। যুক্তি দেখানো হয়েছে, বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় রয়েছে। আবার সিবিআই-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাই বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টে সিবিআই-এর তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। এই দুই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৭ মে।
আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বর্ষপূর্তি, ‘মা-মাটি-মানুষকে’ উৎসর্গ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে সোমবারই হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেইসঙ্গে তদন্ত শেষ করার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জমা দেওয়া রিপোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, ফরেন্সিকের কিছু বিষয় ও তথ্য জোগার এখনও বাকি রয়ে গিয়েছে। তাই আরও কিছু সময় চাওয়া হয়েছে তদন্তের জন্য।সেইসঙ্গে খুবই সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় চার্জশিট ফাইল না হওয়া পর্যন্ত রিপোর্টে বাইরে প্রকাশ না করারও আর্জি জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে। পাশাপাশি, হাঁসখালির এই মামলাটি নদীয়া থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করারও আবেদন জানানো হয়েছে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে। আদালত মামলা স্থানান্তরিত করার কারণ দর্শাতে বলেছে। এবং চার্জশিট ফাইল হলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি যাতে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে না আনা হয় তার জন্য আদালতের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও চেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সোমবার একইসঙ্গে বগটুই হত্যা এবং তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ খুনের ঘটনায় রিপোর্টও জমা দিয়েছে সিবিআই। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বগটুই গণহত্যায় অভিযুক্ত দুই নাবালককে জামিন দিয়েছে জুভেনাইল কোর্ট। তাদের জামিন খারিজের জন্য আদালতে আবেদন করেন কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। হাইকোর্ট সিবিআইকে নিম্ন আদালতে জামিন খারিজের আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ, প্রতিবাদে রাজপথে BJP
অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, কোনও কেস ডায়েরি ছাড়াই ওই দুই অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে জুভেনাইল কোর্ট। সিবিআই জামিন খারিজের আবেদন করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে জুভেনাইল কোর্ট। তিনি দাবি করেছেন, জামিন পাওয়া ওই দুই অভিযুক্তের বয়স ১৬ বছরের বেশি। উনি আদালতের কাছে কেস ডায়েরি তলব করার আবেদন করেন। এবং স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে হাইকোর্ট জামিন খারিজ করে দিতে পারে বলেও জানান। তাঁর এই আবেদনের পরই প্রধান বিচারপতি সিবিআই কে নির্দেশ দেন, নিম্ন আদালতে জামিন খারিজের আবেদন করতে। এদিন বগটুই হত্যার মামলা বীরভূম থেকে কলকাতাতে স্থানান্তরিত করার আবেদনও জানানো হয়েছে।