দেশের খবর
অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখেই নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা বাড়ছে! মত কেরালা হাইকোর্টের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস খবর: করোনার কারণে গত দু’বছর লকডাউনে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্র সমাজের মধ্যে মোবাইলে আসক্তির অনেকটাই বেড়েছে। আর তার কুপ্রভাব ইতিমধ্যেই সামনে আসতে শুরু করেছে। অনলাইনে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি বাড়ায় বাচ্চাদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। আর তাতেই নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনাও বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি এক মামলার রায় দিতে গিয়ে এমনই দাবি করেছে কেরালা হাইকোর্ট। ১৩ বছরের এক ধর্ষিতা নাবালিকার গর্ভপাতের অনুমতি দিতে গিয়ে কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি ভিজি অরুণ পরামর্শ দিয়েছেন, স্কুলের পাঠ্যে যৌনতা বিষয়ক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহারেও জোর দেওয়া হোক।
যে মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি এই পরামর্শ দিয়েছেন সেই মামলাতে অভিযোগ উঠেছিল, ১৩ বছরের এক নাবালিকাকে তার দাদা ধর্ষণ করায় সে অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। ওই নাবালিকার মা দাবি করেছেন, অন্তঃসত্ত্বা নিয়ে ওই কিশোরীর কোনও ধারণাই ছিল না। তাই সে বাড়িতে এই ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। সম্প্রতি সে তার মাকে জানায়, গত দুই মাস ধরে তার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং তলপেটে ব্যথা করছে। তারপরই তার মা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তখনই জানা যায়, ওই নাবালিকা ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা! ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত অনুমোদিত। কিন্তু ওই নাবালিকা ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এত অল্প বয়সে সন্তানের জন্ম দিলে তার জীবন এবং মানসিকতায় গভীর প্রভাব পড়বে। তাই ওই নাবালিকার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই কিশোরীর মা।
এদিন সেই মামলার শুনানিতেই কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি ভিজি অরুণ বলেছেন, ‘এই ছোট ছোট শিশুদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা আমাকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আর এই সমস্ত ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক সদস্যরাই যুক্ত। আমার মনে হয় স্কুলের পাঠ্যসূচিতে যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করার কথা চিন্তাভাবনা করা উচিত। ইন্টারনেটে সহজেই পর্নোগ্রাফি পাওয়া যাচ্ছে। যা এই ছোট ছোট শিশুদের মনকে ভুল পথে চালিত করছে। এবং যৌনতা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের আরও শিক্ষিত করা উচিত বলেই আবার মনে হয়।
যেহেতু নাবালিকার বয়স খুবই কম, তাই এক্ষেত্রে গর্ভপাতে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।তাই বিচারপতি এদিন বলেন, এখন একদিনও দেরি হওয়া মানে ওই নাবালিকার যন্ত্রণা ও কষ্ট আরও বাড়বে। তাই তিনি সরকারি হাসপাতালে সুপারকে অবিলম্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে, তাই গর্ভপাত এবং প্রসবের ক্ষেত্রেই এখন ওই কিশোরী প্রাণের ঝুঁকিও রয়েছে। তাই ওই নাবালিকার মাকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তাঁকে লিখিতভাবে জানাতে হবে যে তাঁরা নিজেদের ঝুঁকিতেই অস্ত্রোপচারে সম্মতি দিচ্ছেন। পাশাপাশি আদালত এও জানিয়ে দিয়েছে, যদি শিশুর জন্ম হয় এবং ওই নাবালিকা ও তার পরিবার যদি শিশুটির দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে, তাহলে ওই নবজাতকের চিকিৎসা এবং অন্যান্য দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দফতরকেই।