দেশের খবর
বাজেট ২০২২, কর পরিকাঠামো অপরিবর্তিত রেখে ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় জোর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: দেশজুড়ে করোনার আতঙ্ক ও মহামারীর মধ্যেই মঙ্গলবার সংসদে এই বছরের বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই এই বাজেটে আগামী ২৫ বছরে দেশকে দিশা দেখাবে বলেই মঙ্গলবার দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী।
কর পরিকাঠামোকে অপরিবর্তিত রেখে এবারের বাজেটে পড়ুয়াদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় একগুচ্ছ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। কারণ, গত দু’বছর ধরে করোনার কারণে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা। অনলাইনে পড়াশোনার জন্য বেশকিছু এডুকেশনাল চ্যানেল আনার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই টিভি চ্যানেলে নানা অনুষ্ঠান দেখানো হবে। রেলের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি গোটা দেশে আগামী ৩ বছরের মধ্যে ৪০০ নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। আগামী তিন বছরে ১০০টি পিএম গতিশক্তি কার্গো টার্মিনাল তৈরি হবে। কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ক্ষেত্রে গম এবং ধান সংগ্রহের জন্য ২ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। কৃষকদের সাত লক্ষ কোটি টাকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হবে। সেচ ও পানীয় জলের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবারের বাজেটে এলআইসি-এর শেয়ার দ্রুত বাজারে আসছে বলে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা বিলগ্নীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এদিনের বাজেটে আগামী ৫ বছরে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছেন এই মুহূর্তে দেশে বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ। কর্মসংস্থানের হার ৩৮ শতাংশ। মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ৩০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আয়কর ছাড় নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও, অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে আয়কর কাঠামোতে কোনও বদল হবে না বলেই জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ব্যক্তিগত কর কাঠামোও একই থাকবে বলে তিনি জানান। এদিনের বাজেটে দেশে তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কমার কথা বলা হয়েছে। সস্তা হবে পোশাক, চর্মজাত দ্রব্য, মোবাইল ফোন, চার্জার। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে আরও এক বছরের করে ছাড় দেওয়া হল। অন্যদিকে, ডিজিটাল সম্পত্তিতে বসছে কর, নতুন অর্থবর্ষ থেকে এই কর দিতে হবে। অন্যদিকে, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য কর ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে পেনশনভোগীদের। জাতীয় পেনশন প্রকল্পে কর ছাড় বেড়ে হল ১৪ শতাংশ। ডিজিটাল সম্পত্তির লেনদেনে ৩০ শতাংশ আয়কর। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জিএসটি থেকে রেকর্ড আয় হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জিএসটি বাবদ জানুয়ারিতে আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা। কমানো হয়েছে কর্পোরেট ট্যাক্স। কর্পোরেট ট্যাক্স ১৮ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। কো-অপারেটিভগুলির সারচার্জ ১২ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশ হল। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার সংস্কারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এবার করদাতারা আপডেটেড রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন ২ বছরের মধ্যে। ক্রিপ্টো কারেন্সিতে আয়ে ৩০ শতাংশ কর। পিপিএফে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তথ্য নথিকরণ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য ওয়ান নেশন, ওয়ান রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা, জমির রেকর্ড রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। এ ছাড়াও কৃষিকাজের সহায়তায় ড্রোনের ব্যবহার, ব্যাটারিচালিত পরিবহণ, ব্যাটারির চার্জিং সেন্টার বাড়ানো হবে বলেও বলা হয়েছে। এদিনের বাজেটে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাতেও জোর দিল কেন্দ্র। চলতি বছর থেকেই বাজারে ডিজিটাল মুদ্রা আনবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ জোর। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবাতেও জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সব গ্রামে অপটিকাল ফাইবার বসবে। ভারত নেট প্রকল্পেও জোর দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে দেশে ৫জি স্পেকট্রাম নিলাম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা খাতে গবেষণার জন্যও ২৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেট। অ্যানিমেশন, কমিকস, গেমিংয়ের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেমেন্টের জন্য ই-বিল ব্যবস্থা চালু হবে। ব্যবসার উন্নতিতে সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম চালু হবে। একটি ফর্মেই সমস্ত অনুমোদন সম্ভব হবে। এই বাজেটে দেশে চারটি কোল গ্যাস পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা বলা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে।
সৌরবিদ্যুতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। উত্তর পূর্বের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২ লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উন্নয়নের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। একইসঙ্গে ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে ২৩টি ন্যাশনাল টেলিমেন্টাল হেলথ সেন্টার তৈরি হবে। চলতি বছরেই দেশজুড়ে চালু হবে অনলাইনে পোস্ট অফিস। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির জন্য এই বিশেষ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৮০ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে এই যোজনায়র অধীনে। এছাড়াও পানীয় জলের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দেশের ৭৫টি জেলায় ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং কেন্দ্র হবে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলিতেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্র। যাতায়াত সুগম করার জন্য পিপিপি মডেলে রোপওয়ে তৈরির কথাও বলা হয়েছে বাজেটে।