দেশের খবর
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: মঙ্গলবাড়ই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ সম্মানে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। পরে যদিও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে সেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সেই নিয়েই রাজ্যে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা।
তৃণমূলের দাবি রাজ্যে গত কয়েকটা নির্বাচনে বামেদের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। তারই পুরস্কার স্বরূপ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ সম্মান দিতে চেয়েছিল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘বাবরি মসজিদ ভাঙার অন্যতম নায়ক তথা উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিঙের সঙ্গে একই বছরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ দেওয়ার পিছনে অবশ্যই একটা কারণ আছে। কারণ, রাজ্যে গত কয়েকটা নির্বাচনে সিপিএমের ভোট গিয়েছে বিজেপিতে। তারই পুরস্কার স্বরূপ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’ তবে তৃণমূলের বর্ষিয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের আবার ভিন্ন মত। তাঁর যুক্তি, ‘এটা কোনও ভোটের ব্যাপার নয়। এখন তো কোনও ভোট নেই বাংলায়। আমার মনে হয়, নরেন্দ্র মোদির সরাকর দেখাতে চেয়েছিল যে তারা খুব উদার।
আর দেখাতে চেয়েছিল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীকে আমরা মনোনয়ন দিয়েছে। সুতরাং, সেই দেখানোটা ওদের ব্যর্থ হয়েছে। তার কারণ, বুদ্ধদেব বাবু ওই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। এবারের পদ্ম সম্মান পুরোটা রাজনৈতিক হয়েছে। এবারের পদ্ম সম্মানে বাংলাকে অসম্মান করা হয়েছে।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, ‘সিপিএম কোনওদিনই পরম্পরা বজায় রাখেনি। কমিউনিস্টরা চিরকাল দেশের সংস্কৃতিকে অপমান করেই এসেছে। তাই পুরস্কার না নেওয়াও সেই অপমানেরই পরিচয়। এই পুরস্কার কোনও রাজনৈতিক দল দিচ্ছে না। এই সম্মান দেয় রাষ্ট্র। তাই এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করে সিপিএম দেশকে অপমান করেছে।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, পদ্ম পুরস্কারের বিষয়ে কিছু জানতেন না তিনি। তাঁর এই বিবৃতির পরই কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ফোন করা হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।
অর্থাৎ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে এ কথা মানতে নারাজ বাম শিবির। বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানতেন না। পুরস্কার গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে কোন সূত্র কী বলছে, তাতে কিছু যায় আসে না।’ পাশাপাশি তিনি বিজেপিকেও আক্রমণ করেছেন। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসুরা পদ্ম পুরস্কার পাওয়ার আশায় রাজনীতি করেননি। ভারতের রাজনীতির জন্য আরএসএস বিপজ্জনক। তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও ভূমিকা পালন করেননি। বাংলার সংস্কৃতি বা মনন যাঁরা বোঝেন না, তাঁরা বুঝবেন না। যাঁরা বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে চলেন, তাঁরা বুঝবেন না। জ্যোতি বসু ভারতরত্ন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ তিনি মানুষের মধ্যে থেকে কাজ করেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো হিম্মত কারও নেই।’