দেশের খবর
মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হতেই প্রকাশ্যে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ৫২ মাসেই ত্রিপুরার বিপ্লব যুগের অবসান। বিপ্লব দেবকে ছেড়ে মানিকেই ভরসা রাখল ত্রিপুরা বিজেপি। তবে এই মানিক বিগত বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন মানিক সাহা। শনিবার দুপুরে আচমকাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিপ্লব দেব। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ডাক্তার মানিক সাহার নাম ঘোষণা করা হয়। একসময় পেশায় দন্ত চিকিৎসক এই মানিক সাহাকে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন বিপ্লব দেব। তারপর তিনি ত্রিপুরা বিজেপি সভাপতি হয়েছেন এবং রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। এবার সেই বিপ্লব দেবের ছেড়ে দেওয়ার গতিতেই বসতে চলেছেন মানিক সাহা।
শনিবার বিকালে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিক সাহার নাম ঘোষণা হতেই প্রকাশ্যে চলে আসে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। ধুন্ধুমার কান্ড বেঁধে যায় বিজেপির দফতরে। গোটা ঘটনায় দলীয় নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে চেয়ার ছুঁড়ে ভাঙচুর করলেন বিপ্লব দেব সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল। শুধু তাই নয়, চোখের জলেও ভাসালেন। সবমিলিয়ে শনিবার এক নাটকীয় পরিস্থিতির সাক্ষী রইল ত্রিপুরা।
সেই ভাঙচুরের ঘটনার দু’টি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পোস্ট করা সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাগে একটি চেয়ার আছড়ে ভাঙছেন রামপ্রসাদ। অন্য ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে, রাগে ফেটে পড়ে চিৎকার করছেন তিনি। কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যাচ্ছে রামপ্রসাদকে। যেভাবে মানিক সাহাকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী করা হল, তাতে শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ত্রিপুরা বিজেপির একাংশ। রামপ্রসাদ পালের মতো বিক্ষুব্ধ নেতাদের দাবি, পরিষদীয় কমিটিতে কোনও আলোচনা না করে, কমিটিকে কিছু না জানিয়েই যে ভাবে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। আরেক বিজেপি বিধায়ক পরিমল দেববর্মার অভিযোগ, মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যাপারে কারও মতামতের তোয়াক্কা করেনি নেতৃত্ব। ফলে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি কার্যালয়ের এই দৃশ্য তুলে ধরে গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।
সামনের বছরেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত এই বিজেপি সরকার টিকে থাকবে বলে মনে করছে না তৃণমূল, বামেদের মতো বিরোধীরা। কারণ, নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বিধায়ক নন। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যেই তাঁকে বিধানসভায় জিতে আসতে হবে। যেখানে বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর ১০ মাস, সেখানে ছয় মাস পর উপনির্বাচনের পথে বিজেপি হাঁটবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা আগামী ডিসেম্বরে গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের যে ভোট রয়েছে, তার সঙ্গেই ত্রিপুরার নির্বাচনকেও এগিয়ে আনতে পারে বিজেপি। তাই যদি হয়, তাহলে এই গোষ্ঠী কোন্দল সামলে নির্বাচনের আগে বিজেপি কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল। আর বিজেপির এই অন্তর্কলহকে হাতিয়ার করেই ত্রিপুরার ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল ও বামেরাও।