রাজনীতি
তৃণমূলের সুরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব অর্জুন সিং, ব্যারাকপুরের সাংসদও কি তৃণমূলের পথে?

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার রাজ্য বিজেপি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরই থেকেই অনেক বিধায়ক পদ্ম শিবির ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন ঘাসফুলে। এবার কি সেই পথেই হাঁটছে চলেছেন অর্জুন সিং! রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। কেন্দ্রের বেধে দেওয়া পাটের দাম নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সুরে কেন্দ্রের সমালোচনা করে সেই জল্পনা নিজেই উস্কে দিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ। এর জন্য পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত রাজ্যের ৪৫ লক্ষ শ্রমিক ভুগছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অর্জুন সিং।
শুধু তাই নয়, এর প্রভাব সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতেও পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না কেন্দ্র ৬ হাজার ৫০০ টাকা কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম প্রত্যাহার করছে ততদিন তিনি তীব্র প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র নিজের পায়ে কুড়ুল মারছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। গত ১৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীয়ূষ গোয়েলকে কড়া ভাষায় চিঠিও দিয়েছেন তিনি। এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের থেকে সদুত্তর চেয়ে তিনি বলেছেন, এতে রাজনৈতিক ক্ষতি করে অর্থনৈতিক লাভ বেশি হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, তার ঠিক একদিন আগেই অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ এই একই বিষয় নিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি অর্জুন সিং বলেছেন, ‘মানুষ ইস্যুতে ভোট দেয়, আমার বা আমার দলের জন্য নয়। আমি একটি জুটমিলে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি একটি জুটমিলে কাজ করেছি। এই মানুষগুলো আমাকে বিশ্বাস করেছে এবং বছরের পর বছর ধরে আমাকে ভোট দিয়েছে। ১৪টি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি কীভাবে বসে বসে দেখব? এই কঠোর সিদ্ধান্তে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন করব। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা আমি সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করি। আমি আশা করি তারা (তৃণমূল কংগ্রেস) এই বিষয়ে আরও আক্রমণাত্মক হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গেও কথা বলব।’
আরও পড়ুন: ময়নাগুড়ির নির্যাতিতা নাবালিকার মৃত্যু, CBI তদন্তের দাবি পরিবারের
অর্জুন সিং এর আগেও বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। এমনকি গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লিখেছিলেন। বস্ত্রমন্ত্রককে কটাক্ষ করে, বিজেপি নেতা বলেছিলেন, “মানুষকে আজকাল জীবন এবং জীবিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আমরা যারা মানুষের সঙ্গে কাজ করি তাদেরও কথা শোনা হচ্ছে না। আমি বিষয়টি নিয়ে মিটিং করব।’
আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের তিন লাখেরও বেশি ভোটে তৃণমূলের জয়ের ঠিক চারদিন পরই গোয়ালকে এই চিঠি লিখেছিলেন অর্জুন সিং। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে পাটের দাম তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব ফেলবে বলেই তাঁর আশঙ্কা। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা ব্যারাকপুরে প্রায় ২০টি পাটকল রয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে মিল মালিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় মিলটিতে কর্মরত শ্রমিক ও পাটচাষীরা প্রতিনিয়ত রাজপথে অবস্থান করছেন।’
তাঁর এই ধরনের অবস্থান এবং ‘বেসুরো’ মন্তব্যের পরই রাজ্য রাজনীতিতে এখন একটাই জল্পনা ঘোরাফেরা করছে, এবার কী অর্জুন সিংও তাঁর পুরনো দলে ফেরার দিকে পা বাড়াচ্ছেন! চারবারের তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবং ১৪ হাজার ৮৫৭ ভোটে টিএমসি প্রার্থী দিনেশ ত্রিবেদীকে পরাজিত করে ব্যারাকপুর থেকে বিজেপি সাংসদ নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ব্যারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত আটটি বিধানসভার মধ্যে সাতটিতেই বিজেপি হারে। একমাত্র ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে অর্জুনের ছেলে পবন জিতেছেন। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে, ভাটপাড়া পৌরসভা বিজেপির হাতছাড়া হয়।
আরও পড়ুন: হারিয়ে গেলে মিলবে দ্রুত খোঁজ, মালদহে চালু হল গরু-ছাগলের আধার কার্ড
যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে অর্জুন সিংয়ের ফেরার জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিলের উপনির্বাচনের ফলাফলের পরে বাংলায় বিজেপির অস্বস্তি বেড়েছে। অনেক নেতা দল ছেড়ে দিয়েছেন৷ রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন। তার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে অর্জুন সিং-এর কেন্দ্রের সমালোচনা, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে অর্জুন সিং ও ফুল বদল করতে চলেছেন! এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য রাজনীতির অলিন্দে।