বাংলার খবর
কলকাতা পুরভোটে রাজ্য পুলিশেই আস্থা আদালতের, রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে বিজেপি

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরভোট করানোর বিজেপির দাবি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুরভোটে রাজ্যের পুলিশেই আস্থা রাখল আদালত। তবে সিঙ্গেল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে বিজেপি।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গেল বেঞ্চ পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট আদালত। কোনও প্রার্থী যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন তাহলে তিনি থানায় অভিযোগ জানাবেন। এবং পুলিশকে তাঁর যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৪ জন প্রার্থী নিরাপত্তাজনিত অভিযোগ তুলেছেন। মূলত এই কারণেই মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।
এদিন আদালতে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী এসকে কাপুর দাবি করেন, মানুষ পথে নামতে ভয় পাচ্ছে। তারই উত্তরে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রত্নাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, মাত্র চারজন এই অভিযোগ করেছেন। তাঁরা পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ করেননি। সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছেন। তার পর ১১ ডিসেম্বর তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। যা যা অভিযোগ এসেছে, কমিশন সেই সব গুলোরই নিষ্পত্তি করেছে।
১৪ ডিসেম্বর সিসিটিভি বসানোর যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, সেগুলিও বসানো হবে। তবে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ওয়াইজে দস্তুর বলেন, ‘সুষ্ঠ ও অবাধে কলকাতা পুরসভার ভোট করাতে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে প্রস্তুত তারা।’ রাজ্যের আইনজীবীও বলেন, ‘এটা কোনও জনস্বার্থ মামলা নয়। মাত্র চার জনের অভিযোগের ভিত্তিতে বলা যায় না, রাজ্য পুলিশ ঠিক মতো কাজ করছে না।
‘ এদিন সব বুথে ওয়ার্ড ভিত্তিক পোলিং এজেন্টর দাবিও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানিয়েছেন, ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বুথভিত্তিক পোলিং এজেন্টর যে দাবি করা হয়েছে। শুধু ওই ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেই বিষয়টা বিবেচনা করে দেখবে কমিশন। কিন্তু সিঙ্গেল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপির আইনজীবী এসকে কাপুর জানিয়েছেন, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনের পর সারা রাজ্য জুড়ে নির্বাচন পরবর্তী যে হিংসা হয়েছিল, আমরা সবাই জানি। বহু মানুষের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হয়েছিল। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল। ফলে মানুষ নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন। সুতরাং কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আর তাছাড়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই।
আমরা তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ কমিশনের ওপর আস্থা রাখায় আমরা ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ প্রধান বিচারপতি মামলাটির গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। আগামীকাল, অর্থাৎ শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। তবে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টের এই রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের কোর্টেই বল পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই রায়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি খারিজ হয়নি।
তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে হাইকোর্ট। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বাড়ল। হলফনামা দিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের উপর তাদের আস্থা রয়েছে। তারা ভালোভাবে আয়োজন করেছে। অবাধ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট করানোর দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। যদি কোনও অশান্তি বা গন্ডগোল হয়, তাহলে সেই দায়ও নিতে হবে কমিশনকে। তখন আমরা আবার আইনি পথেই লড়াই করব।’