মন্দির সংস্কারে সম্প্রীতির নজির, মুসলিম শিল্পীর তুলির টানে জীবন্ত রূপ পাচ্ছে ৩৫০ বছরের পুরোনো মন্দির
Connect with us

বাংলার খবর

মন্দির সংস্কারে সম্প্রীতির নজির, মুসলিম শিল্পীর তুলির টানে জীবন্ত রূপ পাচ্ছে ৩৫০ বছরের পুরোনো মন্দির

Parama Majumder

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমার সুপরিচিত একটি গ্রাম সুরুল। শান্তিনিকেতন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি তার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহাসিক কারণে বিখ্যাত।

গ্রামের জমিদার ছিলেন সরকার বংশ। তাঁদেরই অনুপ্রেরণাতে ১৭৫৩ বঙ্গাব্দ ১২৩৮ সালে এখানে কয়েকটি মন্দির নির্মিত হয়। সুরুলের জমিদার বাড়ি আগলে রেখেছে ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মন্দিরগুলি। লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দিরের মুখোমুখী স্থাপিত একটি শালগ্রাম শিলাই মূল আরাধ্য। মূল মন্দিরটি পঞ্চরত্ন লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির, এর গায়ে অপূর্ব টেরাকোটার কাজ, অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে তবে যেটুকু আছে সেটুকুই তাক লাগিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর সেগুলিকে ফের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সরুল সরকার বংশের ছোটো বাড়ি পরিবার।

মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ণের ছবি যেমন খোদিত হয়েছে, তেমনই খোদিত হয়েছে এখানে এক সময়ে ব্যবসা ববাণিজ্য চালানো ইউরোপীয়দের ছবিও। লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দিরের প্রবেশ দ্বারটি ট্রিপেল আর্চড এন্ট্রেন্স (ত্রিভুজ খিলান প্রবেশদ্বার) ধরনের। কেন্দ্রীয়/ মধ্য ও দুই পাশের খিলানের টেরাকোটা প্যানেলে রামায়ণ মহাকাব্য থেকে রামের অভিষেক, রাবণের অভিষেক এবং রাম রাবণের যুদ্ধের টেরাকোটা ফলক দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে নারায়ণের দশাবতার এবং আরও কিছু পৌরাণিক কাহিনী।

Advertisement

আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে জল থই থই জলপাইগুড়ি, বিপর্যস্ত জনজীবন

সেই পৌরাণিক ক্ষুদ্র মিউরাল গুলোকে ফের তৈরি করা হচ্ছে সেই পুরানো পদ্ধতিতে।
আর এই কাজের  ধরা পড়ছে এক মহা সম্প্রতির ছবি। যেখানে দেখা গিয়েছে প্রতিবেশী জেলা মুর্শিদাবাদ মুসলিম সম্প্রদায়ের শিল্পীরা কাজ করছেন মন্দিরের।

এ বিষয়ে শিল্পী তাজেম সেখ জানিয়েছেন, তাঁরা বেলুড় মঠ, কালীঘাটের স্নান ঘাট, ভিক্টোরিয়াতে কাজ করেছেন। তাঁদের কাছে কখনও ধর্মের বিদ্বেষ বৃহত্তর না। কর্মই হল  পরম ধর্ম। তাঁরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়েন। তারপর আবার নিজের শিল্প কর্মতে মনযোগ দেন।

Advertisement

আরও এক শিল্পী সাজ্জাদ মন্ডল বলেন, ”ভারতের পূরাত্তত্ব বিভাগের প্রাক্তন কয়েক জন সদস্য তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরাই এই কাজের প্রস্তাব দেন। আমরা রাজি হই। আমাদের ১০ জনের একটি দল পুরানো ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য ও মন্দির গীর্জার কাজ করে আসছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। তবে আমরা যে মুসলিম বলে কোথাও কোনও ভাবে অসুবিধা হয়নি”।

তিনি আরও বলেন,  ”এই সরুল বাড়িতে ৬ মাস ধরে কাজ করছি কখনও সরকার বাড়ির পরিবার সদস্যদের এক সঙ্গে পিকনিক হচ্ছে। এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া চলে। বেশ একটা পরিবারের মতো তবে আমরা ওদের শুধু চা পান করতে দিতে পারি।
কারণ আমাদের রান্নার অর্থ ওরা দেন”।

সরকার পরিবারের এক সদস্য জানান,  ১৮ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে তা বহন করছে সরকার বাড়ির সমস্ত সদস্যরা। লক্ষীজর্নাদন মন্দির সংস্কারটা বিরাট চ্যালেঞ্জে আমাদের কাছে এ.এস.আই ডির্পারমেন্ট প্রাক্তন সদস্যদের তত্তবধানে পুরো কাজটি সম্পন্ন হছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে রাজভবন থেকে বেরিয়েই ব্রাত্য বসু বললেন ‘আমাদের রাজ্যপাল’

মুর্শিদাবাদের শিল্পীরা ও কলা ভবনের প্রাক্তন ছাত্র লক্ষণ বাগদী যৌথ পরিশ্রমে ফের পুরানো আদলে পূর্ণর্নিমাণ করা হচ্ছে। গোটা দেশ রাজনৈতিক কারণে ধর্মের বিদ্বেষ তৈরি করছে তবে এই মন্দিরে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায় এক সঙ্গে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: একগুচ্ছ দাবিদাওয়া নিয়ে BDO-কে ডেপুটেশন বাম সমর্থকদের

Advertisement

তিনি আরও জানান, ১৬ বছর ধরে হেরিটেজ তত্তবধানে এটি।  কিন্ত তাঁদের তরফে সেভাবে কোনও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করতে দেখা যায়নি। তাদের নির্দেশ ছিল, এই মন্দিরের কাজ ও আমাদের করতে দেওয়া হত না। শেষ পর্যন্ত আমাদের তরফে এই কাজে হাতে লাগিয়েছি। নিজেদের তরফে ৬ জুলাই এই মন্দিরের শালগ্রাম শিলা রেখে পূজো শুরু হবে। 

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.