দেশের খবর
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার দুর্ঘটনাগ্রস্ত কপ্টারে ব্ল্যাকবক্স, আজ দিল্লি আনা হচ্ছে বিপিন রাওয়াতের দেহ, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সিডিএস বিপিন রাওয়তের এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার করা হল। বৃহস্পতিবার সকালে কুন্নুরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারটির ব্লাক বক্স উদ্ধার হয়। এই ব্ল্যাক বক্সে হেলিকপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত তথ্য এবং ককপিটের কথাবার্তা রেকর্ড থাকে।
দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আগে বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার কী পরিস্থিতিতে ছিল বা দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে কী কথা-বার্তা হয়েছিল, তা এই ব্ল্যাক বক্স থেকে অনুমান করা যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক বক্সটিকে ফরনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রীর দেহ দিল্লিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাঁর বাড়িতেই কফিনবন্দি দেহ শায়িত থাকবে। সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন সকলে। আগামিকাল, অর্থাৎ শুক্রবার দিল্লির ক্যান্টনমেন্টে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এই দুর্ঘটনায় আরও ১১ জন সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই সেই নিহত সেনা আধিকারিকদের পরিবারের সদস্যরা দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনই তাদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে না। দেহ নিশ্চিতরূপে শনাক্ত করার পরই, তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই তদন্তে নেতৃত্ব দেবেন এয়ার মার্শাল মানবেন্দ্র সিং। আজ সকালেই সংসদের দুই কক্ষে এই দুর্ঘটনা ও বিপিন রাওয়াতের মৃত্যু নিয়ে বিবৃতি পেশ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। অধিবেশনের শুরুতেই সংসদের দুই কক্ষে দুই মিনিটের শোক পালনও করা হয়। গতকালই দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর সংসদে এই দুর্ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে প্রতিরক্ষা প্রধানের বাড়িতে যান রাজনাথ সিং।
আজ সংসদে তিনি বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি গত ৮ ডিসেম্বরের দুপুরে ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতের সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়়ে। ওয়েলিংটনের ডিফেন্স স্টাফ কলেজে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার কথা ছিল তাঁর। গতকাল সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে সুলুর এয়ারবেস থেকে বায়ুসেনার এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারটি রওনা দেয়। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে ওয়েলিংটনে অবতরণ করার কথা ছিল কপ্টারটির। দুপুরের ১২টা ০৮ মিনিট নাগাদ সুলুর এয়ারবেসের ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে ওই হেলিকপ্টারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দারা কুন্নুরের জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দেখেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, সামরিক হেলিকপ্টারটি আগুনে জ্বলছে। স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেওয়ার পরই উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং দুর্ঘটনাস্খল থেকে আহতদের উদ্ধার করেন।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে যাদের উদ্ধার করা সম্ভব করা হয়েছিল, তাদের দ্রুত ওয়েলিংটনের মিলিটারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হেলিকপ্টারে যে ১৪ জন যাত্রী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে সিডিএসের স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত, প্রতিরক্ষা পরামর্শদাতা ব্রিগেডিয়ার লখবিন্দর সিং লিড্ডার, স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল হরজিন্দর সিং ও হেলিকপ্টারের কর্মীরা সহ ৯ জন জওয়ান ছিলেন। তাঁদের নাম উইং কম্যান্ডার পৃথ্বী সিং চৌহান, স্কোয়াড্রন লিডার কুলদীপ সিং, জুনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রাণা প্রতাপ দাস, জুনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আরাক্কাল প্রদীপ, হাবিলদার সৎপাল রাই, নায়েক গুরুসেবক সিং, নায়েক জিতেন্দ্র কুমার, ল্যান্স নায়েক বিবেক কুমার, ল্যান্স নায়েক বি সাই তেজা। গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুন সিং বর্তমানে ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। এবং তাঁর প্রাণ রক্ষার জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।’