বাংলার খবর
নিজে ডেকেও কনভেনশনে গরহাজির বিমল গুরুং, পাহাড়ের রাজনীতিতে দলবদলের জল্পনা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: পাহাড় সফরে গিয়ে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দার্জিলিংয়ের(Darjeeling) মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি জানিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই তিনি জিটিএ সহ পাহাড়ের আরও ৩টি পুরসভার ভোট করিয়ে নিতে চান।
সেই নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয় এবং তাতে যাতে পাহাড়ের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে রোশন গিরি জানিয়ে দেন, তাঁরা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি থেকে সরে আসছেন। কিন্তু মুখ্যমনন্ত্রী পাহাড়ে থাকাকালীন সময়েই মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং(Bimal Gurung) জানিয়েছিলেন, জিটিএ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলে তিনি আমরণ অনশন শুরু করবেন।
শুধু তাই নয়, তিনি এক বেসরকারি সংস্থার নামে এক কনভেনশনও ডাকেন। পাহাড়ের পৃথক রাজ্যের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। সেই কনভেনশনে আমন্ত্রণ জানানো হয় দার্জিলিংয়ের বিজেপি(BJP) সাংসদ রাজু বিস্তাকেও(Raju Bista)। সাংসদ নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন ওই কনভেনশনে যোগ দেবেন তিনি। শনিবার, অর্থাত্ এদিনই সেই কনভেনশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন সেই কনভেনশনে যোগ দিলেন না গুরুং। আসেননি বিস্তাও।
আরও পড়ুন: বিধানসভায় নিজের চেম্বারে ঢুকতে পারবেন না শুভেন্দু, বন্ধ হল ভাতা
কিন্তু হঠাত্ করেই গুরুংয়ের এই মতিবিভ্রাটের কারণ কী? একবার বিজেপির দিকে দৌড়াচ্ছেন, একবার তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন? হচ্ছেটা ঠিক কী? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে।
মনে করা হচ্ছে পাহাড়ের রাশ যে তাঁর হাতে আর থাকছে না সেটা বুঝেই জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করে অনশনের হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আবারও পাহাড়ে অশান্তির আগুন ছড়ানোর পরিকল্পনা করে পৃথক রাজ্য গড়ার বিষয়টি নিয়ে বিজেপির হাত ধরে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা ফেঁদেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনায় সায় দেয়নি পাহাড়ের কোনও রাজনৈতিক দলই। বরঞ্চ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো রাজ্যের মধ্যে থেকেই অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন স্বশাসিত বোর্ডের দিকেই তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে জিটিএ ও পাহাড়ের আরও ৩ পুরসভার ভোট করানোর দিকেও তাঁদের সায় রয়েছে। তাই গুরুং তাঁর নিজের মতো করে হাঁটতে গিয়ে পথে একলা হয়ে পড়েছেন। ঘটনা হচ্ছে গুরুংয়ের বিরুদ্ধে রাজ্যে এখনও বহু মামলা ঝুলে রয়েছে। গুরুং বিজেপির হাত ধরে আবারও পাহাড়ে অশান্তির ছক কষছেন সেটা আন্দাজ করেই এবার সম্ভবত বাংলার শাসক দলের তরফে সেই সব মামলা আবারও খোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝেই এদিন আর ওই কনভেনশানে যোগ দেননি গুরুং। আর যেহেতু গুরুং সেখানে যোগ দিচ্ছেন না তাই রাজু বিস্তাও ওই কনভেনশন এড়িয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছেড়ে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন নীতীশ কুমার!
গুরুং জানিয়েছিলেন, তাঁরা রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন কিন্তু জিটিএ নির্বাচন হোক তিনি চাইছেন না। যদিও তৃণমূলের সঙ্গে থাকা পাহাড়ের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চায় জিটিএ নির্বাচন হোক। একমাত্র গোঁ ধরেছিলেন গুরুং। তবে শনিবার তাঁর কনভেনশনে অনুপস্থিত থাকার ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে, ‘একগুঁয়েমি’ থেকে সরেছেন গুরুং। শুধু তাই নয়, বিজেপির সঙ্গেও রাখতে চাইছে দূরত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায় ফিরে আসার একদিন পরেই এদিন ছিল কালিম্পংয়ের বুকে ওই কনভেনশন। আর সেখানেই অনুপস্থিত থাকলেন গুরুং। সুর বদলে তবে কি ‘দিল্লির লাড্ডু’ না খেয়ে পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সায় দিলেন গুরুং? এই প্রশ্নটাই এখন ছড়িয়েছে পাহাড়ের বুকে।