বাংলার খবর
এসএসসি-তে বড় দুর্নীতি, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট কমিটির, বুধবার রায়
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এসএসসি-এর গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিল কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োজিত রঞ্জিত বাগ কমিটি। নিয়োগে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে বলে বলা হয়েছে রিপোর্টে। নম্বর বাড়িয়ে, ওএমআর সিটে গরমিল করে বেআইনিভাবে ৩৮১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও আনন্দ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে এই রিপোর্ট জমা দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত বাগ।
বাগ কমিটির আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে বলা হয়েছে, ৩৮১ জনের নামই ছিল না ওই প্যানেলে। তাঁদের নাম সুপারিশ করেছিল কমিশন। এবং ওই ৩৮১ জনের মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি। প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের মে মাসে তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলের সল্টলেকের নতুন ভবন থেকে। কমিশন থেকেই তাঁদের সুপারিশ করে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের নাম, ঠিকানা এবং বর্তমানে তাঁরা কোথায় চাকরি করছেন সেই তথ্য নেওয়া হয়েছে।
কমিটি তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে, তৎকালীন স্কুল সার্ভিস কমিশনের বেশিরভাগ কর্তারাই কোনও না কোনোভাবে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই দুর্নীতি ও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের নামও প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। তাঁরা হলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব অশোককুমার সাহা, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, ও কমিশনের ৫ আঞ্চলিক চেয়ারম্যান শর্মিলা মিত্র, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিন, মহুয়া বিশ্বাস, চৈতালি ভট্টাচার্য এবং বোর্ডের টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েক।
এঁদের মধ্যে সৌমিত্র সরকার, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং সমরজিৎ আচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার সুপারিশ করেছে কমিটি। সুবীরেশ ভট্টাচার্য, চৈতালি ভট্টাচার্য, শর্মিলা মিত্র, মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৪৬৫, ৪১৭ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় শাস্তি দেওয়া যেতে পারে বলেও সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ও নিয়োগ কমিটির প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহাকেই মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিশনের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতেই সমস্ত সুপারিশপত্র তুলে দিতেন কমিশনের আধিকারিকরা। এরপর টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েক সেগুলো তৈরি করতেন। কল্যাণময় নির্দেশে তারপর সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো হতো। শান্তিপ্রসাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুপারিশপত্র গুলো তৈরি করা হতো বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলেই এই কমিটি তৈরি হলেও, এই বেনিয়মে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জড়িত থাকার কথা এই রিপোর্টে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইকে অনুমতি দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেইমতো তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকেও পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে। পূর্ববর্তী রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ বজায় রাখত ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৮ মে।