বিনোদন
‘বাকি ইতিহাস’ এখন আর নয় বাকি- মুক্তি পেল তুষার বল্লভের প্রথম ছবি

নীপমঞ্জরী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: গত শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি রিলিজ হল তুষার বল্লভ পরিচালিত ছবি ‘বাকি ইতিহাস’। বাংলা পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ ‘বাকি ইতিহাস’এর হাত ধরে। এর আগে তিনি দুটি শর্ট ফিল্ম করেছেন। ‘জোনাকি’ ও ‘অবেলা’। এই দু’টি শর্ট ফিল্মসই বেশ ভালোই প্রশংসা অর্জন করেছিল।
২০১৯ সালে ‘বাকি ইতিহাস ‘ ছবির কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ২ বছর অপেক্ষার পর মুক্তি পেল ছবিটি। স্বভাবতই ভীষণই খুশি পরিচালক সহ গোটা টিম। ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে কলাকুশলীদের ওয়ার্কশপ চলে দীর্ঘ ৬ মাসের। চরিত্রগুলো যাতে সঠিক ভাবে ফুটে উঠতে পারে তার জন্যই এই ওয়ার্কশপের আয়োজন তা বলাই বাহুল্য। এই ছবির দুই অন্যতম প্রধান চরিত্র বাবলু এবং গৌরী। এই দু’টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তন্ময় মজুমদার এবং সঙ্গীতা বল্লভ। এই ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন অনির্বান রায়। এছাড়াও আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে দেখা যাবে। বাবলুর বাবা নিতাই এবং বাবলুর বন্ধু জনা। এই চারটি চরিত্রই বেশ গুরুত্ব পেয়েছে এই ছবিতে। এই ছবির গোটা শুটিং হয়েছে বাঁকুড়ায়। গ্রাম বাংলার প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে ‘বাকি ইতিহাস’ ছবিটি। গ্রাম বাংলার সহজ, সরল মনের মানুষদের ছবি ফুটে উঠেছে। আবার এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু আকস্মিক ঘটনাও দেখা গিয়েছে। এই সোজা মানুষগুলো অনেক সময়ই পরিবেশ -পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিপথে যায় কিংবা বলা যেতে পারে যেতে বাধ্য হয়।
আর তারপর তাদের পরিণতি কী হতে পারে, সেটাই দেখানো হয়েছে ‘বাকি ইতিহাস’ এ। এই ছবিতে এক দিকে দুই বন্ধুর জীবন আর একদিকে আছে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। গল্পের বাবলু চরিত্রে এক গ্রাম্য বালকের সরলতা ফুটে উঠেছে। স্কুল শেষ করে বাবলু কলেজ জীবন শুরু করার পথে। একটি ছেলের বয়ঃসন্ধি কালের নানান চিন্তা-অনুভূতি গুলো সুন্দর করে ফুটে উঠেছে বাবলুর চরিত্রে। গৌরী দি অর্থাৎ গল্পের নায়িকা তারই গ্রামের এক মেয়ে। বয়সে বাবলুর থেকে কিছুটা বড়। এই দু’জনের মধ্যে এক অজানা টান থাকলেও সেটা সুপ্তই থাকে। অন্যদিকে, বাবলুর বাল্য বন্ধু জনার আছে প্রতিবাদী-সত্তা। সে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না। তাই তার মা-বাবাকে যারা আঘাত করে, তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে ফেরার হয়। পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। কিন্তু বাবলুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে সে।
বাবলু আর তার বাবার সম্পর্কটি দর্শকদের মনে কোথাও বাৎসল্যের ছোঁয়া দিয়েছে। আবার গৌরির সঙ্গে বাবলুর এক অসম প্রেম, সেটাও দর্শক মনকে নাড়া দিয়েছে। জনার সঙ্গে বাবলুর যে বন্ধুত্ব, তা ভীষণ সুন্দরভাবেই বর্ণিত হয়েছে এই ছবিতে। শেষে কিন্তু প্রতিটি চরিত্রের পরিণতি নাড়া দিয়েছে দর্শক মহলকে।ছবিটির সংগীত পরিচালক অনির্বান রায়ের গান গুলিও সঠিকভাবে, সঠিক জায়গায় ব্যবহার হয়েছে। এক কথায় বলা যায় যে ,প্রতিটি চরিত্রই নিজের নিজের জায়গায় বেশ সাবলীল। বাবলু অর্থাৎ তন্ময় তাঁর চরিত্রটি ভীষণই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাষায় প্রাদেশিক যে টান সেটাও ফুটে উঠেছে। জনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরভ মন্ডল। তাঁর অভিনয়ও প্রশংসার অধিকারী। সর্বোপরি এ কথা বলাই যায় পরিচালক তুষার বল্লভ তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতে দক্ষতার সঙ্গেই বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রেখেছেন।