বাংলার খবর
বাঁদনা পরবের শেষে জঙ্গলমহল মেতে উঠল ‘গরু খুঁটান’ উৎসবে

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: করোনা আবহের মধ্যেও বাঁদনা পরবের ‘গরু খুঁটান’ উৎসবে মেতে উঠল ঝাড়গ্রাম। জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামের জরকা, সাঁকরাইলের ভামাল, বিনপুরের লালগড়, জাম্বনীতেও ঘটা করে উদযাপিত হল ‘গরু খুঁটান’ উৎসব। যখন কুয়াশায় ভেসে যাচ্ছে চারিদিকে, সেই সময় এই এলাকার বাসিন্দারা এই উত্সবে মেতে ওঠেন।
প্রথা মেনে কালীপুজোর দিন থেকেই এই পরব শুরু হয়ে যায়। তারপর তা চলে ভাই ভোঁটার দিন পর্যন্ত। তবে অনেকে বলেন ‘বন্দনা’ থেকেই ‘বাঁধনা’ শব্দটি এসেছে। এই উত্সব মূলত গরুর বন্দনা করা। ভাই ফোঁটার দিন হয় গরু খুঁটান উৎসব। গ্রামের ফাঁকা মাঠে গাছের মোটা ডাল পুঁতে সেখানে বলদ বা ষাঁড় বেঁধে রাখা হয়। তারপর তার সামনে মরা পশুর চামড়া ঘুরিয়ে বিরক্তি তৈরি করা হয়। গোল করে ঘিরে থাকা দর্শকরা ঢাক, কাঁসর বাজান। প্রায় উন্মত্ত অবস্থায় বলদ বা ষাঁড় লাফালাফি করতে থাকে। তা দেখে খুশি হন দর্শকরা। এই সময় বাড়ির মেয়ে-জামাইকে বাড়িতে নিয়ে এসে আদর-যত্ন করা হয়। জামাইকে শাশুড়ি ফোঁটা দেন। ‘বাঁদনা’ এক ধরনের কৃষি উত্সব। মাঠে এই সময় পাকা ধান থাকে।
কয়েকদিন পরেই সেই ধান গোলায় ভরা হবে। তাই তার আগে কৃষি কাজে সাহায্যকারী পশু গরুর যত্ন করা হয়। সাধারণত ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পরের দিনে বাঁদনা পরবের শেষ পর্যায়ে ‘গরু খোঁটান’ অনুষ্ঠিত হয়। তাই কোরোনা আবহেও চলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভাদুতলায় ‘গরু খোঁটান’। বাদ যায়নি ভাদুতোলার সামনে কুর্মী অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রাম ধান্যসোল। বেঁধে রাখা বলদ বা এঁড়ে গরুদের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মৃত মোষের চামড়া। বলদ বা এঁড়ে গরুগুলো যখন ওই চামড়া গোঁতাতে যায়, বেজে ওঠে ঢাক, মাদল। হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠে সমবেত জনতা। ‘গরু খোঁটানে’র সময় সমবেত গান করা হয়, “এতদিন চরালি ভালা, কোচাখুঁদি রে, আজ তো দেখিব মরদানি চার ঠেঙে নাচবি, দুই শিঙে মারবি, রাখিবি বাগাল ভাইয়ের।” খোঁটানের উদ্যোক্তা ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘গত বছর কোভিড পরিস্থিতির জন্য আমাদের কূর্মী জাতির এই সংস্কৃতি একটু ফিকে হয়ে গিয়েছে। তাই আগামী বছর থেকে আরও মহা সমারোহে পালিত হবে করম পরব, বাদন পরব।’