বাংলার খবর
টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী সরব হতেই রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝোলালেন সমিতির সদস্যরা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে সরব হতেই রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ সদস্যরা। যা নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল রায়গঞ্জের রাজনীতি। দলের বিধায়কের কাছ থেকে অপমানিত হওয়ার অভিযোগ তুলে শুক্রবার বিকালে রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি অফিস অনির্দিষ্টকালের জন্য তালাবন্ধ করে দেন তৃণমূল পরিচালিত রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা। যদিও রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী জানিয়েছেন, রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার নিয়ে চলা দুর্নীতির প্রতিবাদ করতেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির অফিস তালাবন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি কাউকে ডেকে কোনও অপমান করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি।
রায়গঞ্জ ব্লকের উন্নয়নমূলক ২৫টি কাজের জন্য শনিবার টেন্ডার জমা নেওয়ার কথা ছিল। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মানস ঘোষের অভিযোগ, বিধায়ক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, অন্যান্য সদস্য এবং দলনেতা অনিল দেবনাথকে তাঁর অফিসে ডেকে চরম অপমান করেন। হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মনের অভিযোগ, শনিবার সকালে টেন্ডার জমা দেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার দু-তিন মিনিট পরে এসে টেন্ডার জমা দিতে গিয়ে বিধায়কের লোকজন গন্ডোগোল করে এবং তাঁদের ধমকান। বিধায়কের লোকেরা অসৎভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। সেই নিয়েই অশান্তি। তারই প্রতিবাদে সমিতির বোর্ড সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে শুক্রবার বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির অফিস বন্ধ করে দেওয়া হল। যদিও, পঞ্চায়েত সমিতির অফিস বন্ধ রাখা হলেও সরকারি কর্মসূচি দুয়ারে সরকারে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা তাঁদের নিজেদের এলাকায় সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেবেন বলে দাবি করেছেন মানস ঘোষ।
যদিও, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। তিনি জানিয়েছেন তিনি কাউকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে কোনও অপমান করেননি। অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘আমি শুক্রবার ওঁনাদের কাউকে ডাকিনি। ওঁনারা নিজেরাই আমার কাছে এসেছিলেন। যদি আমি ডাকতাম, তাহলে আমি ফোন করতাম। ওঁনারা রিসিভ কল লিস্ট দেখান, যে আমি ফোন করেছি। ওঁনারা নিজেরাই এসেছিলেন। যেমন বিধায়ক হিসেবে আমি সবার সঙ্গে দেখা করি, ওঁনাদের সঙ্গেও আমি তেমন দেখা করেছিলাম। ওঁরাই আমাকে বিগত কয়েকদিন ধরে ফোন করছিলেন টেন্ডার আছে বলে। আমি তখন একটাই কথা বলেছিলাম, যে কাজ হবে তার জন্য ওপেন টেন্ডার ডাকা হয়েছে। নিয়ম মেনে সবাই অংশ নিতে পারবে। প্রথমেই টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী টেকনিক্যাল বিড খুলে তারপর ফিনান্সিয়াল বিড খোলা হয়। যে যোগ্য হবে, সে টেন্ডার পাবে। এখানে বিগত কয়েক বছর ধরেই টেন্ডার হত না। কিছু অসামাজিক লোক কিছু নেতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০-২৫ শতাংশ তোলাবাজি করে এই টেন্ডারগুলো পাইয়ে দিত। আমি তার পূর্ণ প্রতিবাদ করি। যারা অসমাজিক লোকজনদের সঙ্গে মিলে এই ধরনের দুর্নীতি করে, তারা কোনও দলের হতে পারে না। আমি সরকারি নিয়মকে মান্যতা দিয়েছি। ওপেন টেন্ডারে মানুষ অংশ নিয়েছে। আমি যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকতাম তাহলে টেন্ডারে কাউকে অংশ নিতে দিতাম না। অংশ না নিলেই তো সমঝোতা করা যায়। টেন্ডার অংশ নিলে যে যোগ্য ব্যক্তি, সে কাজ পাবে। না হলে সে কাজ পাবে না। তার মানে এখানে সমঝোতা হচ্ছে না। তার মানে কি ওঁনাদের আগে থেকেই সব কিছু ঠিক করা ছিল! এটার জবাব তো ওঁনারাই দিতে পারবেন। সরকারি নিয়মের বিরুদ্ধে তাঁরা কাজ করেছেন। সরকার, প্রশাসন আগামীদিনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে তাঁদের বিরুদ্ধে।’
গোটা বিষয়টা নিয়ে অভিযোগকারীরা পাল্টা উচ্চতর নেতৃত্বকে জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ছেন। তাদের সেই দাবিকেও স্বাগত জানিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। গোটা ঘটনার প্রকৃত তদন্ত চেয়ে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, ‘কারা পঞ্চায়েত সমিতির অফিস বন্ধ করেছেন, কারা তালা মেরেছেন, এটার আমি পূর্ণ তদন্ত চাই। যে টেন্ডার হয়েছিল, তা আইন মেনে হয়েছিল কি হয়নি, তা বিডিও, ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে জিজ্ঞাসা করুন। যদি আইন মেনে টেন্ডার হয়ে থাকে তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কখন টেন্ডার জমা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তো প্রশাসন আছে। যদি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর টেন্ডার জমা পড়ে, তাহলে তা নিয়ম মেনে হয়নি। এমনিতেই তাদের টেন্ডারগুলো বাতিল হয়ে যাবে। আমি আমার রায়গঞ্জ বিধানসভায় কোনরকম দুর্নীতি বরদাস্ত করব না। হেমতাবাদের বিধায়ক উচ্চপর্যায়ে জানাবেন বলেছেন। আমি স্বাগত জানাই। আমি চাই এটার পূর্ণ তদন্ত হোক। যারা এর সঙ্গে জড়িত আছে, যারা ব্লক অফিসকে ঘুঘুর বাসা তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ থাকবেই। এখানে সরকারি নিয়ম মেনেই সবকিছু হবে। যারা দুর্নীতি, তোলাবাজি চালাতে চায়, সেটা আমি হতে দেব না।’