খেলা-ধূলা
অশ্বিনের রেকর্ডেও তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের, শেষবেলায় ম্যাচ বাঁচিয়ে নিল কিউয়িরা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: তীরে এসে তরী ডুবল। কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক টেস্ট জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার। রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের আঙ্গুলের ভেলকি সামলে দিয়ে শেষ বেলায় ম্যাচ বাঁচিয়ে নিল নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের নিশ্চিত হারা টেস্ট ড্র করার দুই কান্ডারী হলেন রাচীন রবীন্দ্র এবং আজাজ প্যাটেল। ৮৯.২ ওভারে ১৫৫ রানে নবম উইকেট পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। তারপরও ৮.৪ ওভার অর্থাৎ ৫২ বল খেলা হল। কিন্তু অনড় রাচীন বা আজাজকে আউট করতে পারলেন না কোনও ভারতীয় বোলারই। ফলে কানপুরের প্রথম টেস্ট শেষ হল অমীমাংসিত ভাবেই। এখান থেকে ভারত ম্যাচটা ড্র করবে তা কল্পনাও করতে পারেননি অতি বড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও। জয়ের সেলিব্রেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল কানপুর গ্রীনপার্ক স্টেডিয়ামের গ্যালারিও। জয় ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু সেই অপেক্ষা অপেক্ষাই রয়ে গেল। ৯৮ ওভারে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে ১৬৫ রান তুলতেই ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা। এই ড্র নিউজিল্যান্ডের কাছে নৈতিক জয়। শচীন তেন্ডুলকর এবং রাহুল দ্রাবিড়ের নাম মিলিয়ে রাচীর নাম রেখেছিলেন তাঁর বাবা-মা। সেই রাচীনই রাহুল দ্রাবিড়ের কোচ হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পথে সবথেকে বড় কাঁটা হয়ে উঠলেন। উইকেট কামড়ে পড়ে থেকে ৯১ বলে জোড়া বাউন্ডারির সাহায্যে ১৮ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে অপরাজিত রয়ে গেলেন। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেওয়া আজাজ ২৩ বলে করলেন অপরাজিত ২ রান। তাঁদের দু’জনের এই ইনিংস মূল্যবান বললেও কম বলা হবে। ভারতের ২৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে রবিবারই ১ উইকেটে ১৪ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। সোমবার ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৯ উইকেট।
৮ উইকেট ফেলতে পারলেও, শেষ উইকেটটা আর তুলতে পারলেন না অক্ষর, অশ্বিন, জাদেজারা। বাগে পেয়েও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের হারাতে পারলেন না অজিঙ্কা রাহানেরা। রবিবার অপরাজিত থাকা টম লাথাম ও উইলিয়াম সমারভিল এদিন শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই টম লাথাম এবং উইলিয়াম সমারভিলের জুটি ভেঙে দেন উমেশ যাদব। নাইট ওয়াচম্যান সমেরভিলেকে (৩৬) ফিরিয়ে দেন তিনি। সেই সেশনে পড়ে তিনটি উইকেট। অর্ধশতরান করা লাথামকে (৫২) ফিরিয়ে দেন অশ্বিন। জাদেজার শিকার হন রস টেলর (২)। চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ১২৫ রানে চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। শেষ সেশনে দরকার ছিল ৬টি উইকেট।
চা পানের বিরতির পর শুরুতেই হেনরি নিকোলসকে (১) ফেরান অক্ষর প্যাটেল। উল্টো দিকে একা কুম্ভ হয়ে দুর্গ রক্ষা করছিলেন কিউয়ি অধিনায়ক কেন উয়িলিয়ামসন। কিন্তু জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে উয়িলিয়ামসন (২৪) ফিরতেই ভারতের জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই উজ্জ্বল হয়ে যায়। এরপর টম বান্ডলকে (২) অশ্বিন এবং কেইল জেমিসন (৫) ও টিম সাউদিকে (৪) জাদেজা ফিরিয়ে দিতেই ভারতের জয় ছিল তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু রাহুল, রাহানেদের বারা ভাতে ছাই ঢেলে দিলেন রাচীন ও আজাজ। ৪০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন জাদেজা। ৩৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন অক্ষর প্যাটেল ও উমেশ যাদব। সোমবার কানপুরে রেকর্ড গড়লেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টম লাথামকে ফিরিয়ে দিতেই হরভজন সিংয়ের টেস্ট উইকেটকে টপকে গেলেন তিনি। টেস্টে ৪১৮টি উইকেট নিলেন অশ্বিন।
ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক টেস্ট উইকেট শিকারির তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এলেন অশ্বিন। তাঁর সামনে এখন শুধু অনিল কুম্বলে এবং কপিল দেব। ১০৩ টেস্টে হরভজনের উইকেট সংখ্যা ৪১৭। সেখানে ৮০ টেস্টে অশ্বিনের শিকার ৪১৮। তালিকার শীর্ষে থাকা কুম্বলের টেস্টে ৬১৯টি উইকেট রয়েছে। তাঁর থেকে এখনও ২০১টি উইকেট দূরে রয়েছেন অশ্বিন। তবে কপিলের থেকে বেশি দূরে নেই তিনি। কপিল টেস্টে ৪৩৪টি উইকেট নিয়েছেন। আর ১৭টি উইকেট নিলেই ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে টপকে যাবেন অশ্বিন। দুই ইনিংসে ১০৫ ও ৬৫ রান করে অভিষেক টেস্টেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার।