বাংলার খবর
অর্জুন দল ছাড়তেই ঘরে ও বাইরে শুভেন্দুকে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত লোকসভা নির্বাচনে বিশাল সাফল্য আসার পর গত একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়তেই রাজ্যে বিজেপির রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক বিধায়ক, সাংসদ দলবদল করেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিনই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক দেখা যাচ্ছে। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ হাতছাড়া হচ্ছে। এর মধ্যেই গত রবিবার ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূলের ফেরায় রাজ্য বিজেপিতে অসন্তোষ বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। দলের এই অবস্থার জন্য অধিকাংশ নেতৃত্বই শুভেন্দু অধিকারীকে কাঠগড়ায় তুলছেন। যার জন্য ঘরে বাইরে রীতিমতো কোনঠাসা অবস্থা রাজ্যের বিরোধী দলনেতার।
অর্জুন দল ছাড়ার পরে সোমবার রাজারহাটের এক হোটেলে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। সভায় শুভেন্দু উপস্থিত ছিলেন কিনা জানা না গেলেও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য রাজ্য নেতৃত্ব। ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পর্যবেক্ষক তথা সাইবার সেলের প্রধান অমিত মালব্য। সেই সভাতেই অর্জুনের গড় এবং ব্যারাকপুরে জেলা বিজেপির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুর হাতে। বিজেপি সূত্রে খবর দলের অনেকেই শুভেন্দুর এই বাড়বাড়ন্ত মেনে নিতে পারছেন না। জানা গিয়েছে, সোমবারের এই বৈঠকে দলের দুই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে দলে কাজ করা যাচ্ছে না বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শুভেন্দু যেভাবে দলের পুরোনো নেতৃত্বের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন, তা মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। এমনকি, শুভেন্দু রাজ্য বিজেপিকে ভাঙ্গার অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে রাজ্য বিজেপির একাংশ। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের পাশাপাশি দু’দিন আগে দলত্যাগী অর্জুন সিংও দাবি করেছিলেন, রাজ্যে দলের সংগঠন ঠিক অবস্থায় নেই। অর্জুনের তীর যে শুভেন্দুর উদ্দেশ্যই ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুধু দল নয়, নিজের গড় নন্দীগ্রামেও শুভেন্দুকে নিয়ে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। মণ্ডল সভাপতি বদল নিয়ে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে নন্দীগ্রামের বিজেপি শিবিরে। সম্প্রতি নন্দীগ্রাম-১ দক্ষিণ মন্ডলের সভাপতি জয়দেব মণ্ডলকে সরিয়ে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ শ্যামাপ্রসাদ মাইতিকে মন্ডল সভাপতি করা হয়। তা নিয়েই বেজায় চটেছে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, কালীচরণপুর, গোকুলনগর এলাকার বিজেপির একাংশ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নন্দীগ্রামের শ’দুয়েক বিজেপি কর্মী গণ ইস্তফার হুমকিও দিয়েছে। তারমধ্যে জয়দেব ছাড়াও মণ্ডল কমিটির দু’জন সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত মিদ্যা ও বিষ্ণুপদ প্রামাণিক, সহসভাপতি রবীন পাত্র, অসীম করণ, মহিলা মোর্চার মণ্ডল সভাপতি মোহিনী দাস এবং যুব মোর্চার মণ্ডল সভাপতি পূর্ণ পাত্র রয়েছেন। সোমবার জরুরি বৈঠক করার পর তাঁরা গণ ইস্তফার এই হুঁশিয়ারি দেন। জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও তাঁরা এই নিয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে ঘরে ও বাইরে এখন রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থা শুভেন্দুর।