ভাইরাল খবর
পৌরভোটে রাজ্যজুড়ে অশান্তি, বোমা-গুলি, মারপিট, ভাঙচুর, ছাপ্পা, বুথ দখলের অভিযোগ! ভোট পড়ল ৭৬.৫১ শতাংশ

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণ ভোট করার আশ্বাস হাইকোর্টকে দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রবিবার রাজ্যের ১০৮ টি পৌরসভায় নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ হল না। মারপিট, অশান্তি, বোমাবাজি, গুলি, প্রার্থীকে মারধর, ছাপ্পা ভোট, সাংবাদিক ও পুলিশকে মারধর- কিছুই বাদ রইল না।
শাসক ও বিরোধী- দুই পক্ষের প্রার্থী, কর্মীরাই আক্রান্ত হলেন। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। এদিন ভোটের শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এক হাজারের মতো অভিযোগ এসেছিল। সবকটির ক্ষেত্রেই দ্রুততার সঙ্গেই ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিনের নির্বাচনে মোট ৮৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রিভেনটিভ অ্যারেস্ট হয়েছে ৭৮৭ জন। এবং স্পেশাল কেসে অ্যারেস্ট হয়েছে ৪৭ জন। রবিবার গড়ে ভোট পড়েছে ৭৬.৫১ শতাংশ। রবিবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায় ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চতুর্দিক থেকেই অশান্তির খবর আসতে শুরু। বহরমপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে রাস্তায় নামেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজের গাড়িতে করে কংগ্রেস এজেন্টদের নিয়ে এসে বুথে বসার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। বীরভূমের দুবরাজপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮৯ নম্বর বুথে রঞ্জনবাজার হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজেপির এক ভোট কর্মী চন্দ্রশেখর গুপ্তাকে মুখে ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছ তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকী তাঁকে ভোটও দিতে দেওয়া হইনি বলে অভিযোগ। শান্তিপুর পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬৩ নম্বর বুথে সিপিআইএম প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের প্রাক্তন কর্মচারীর বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, বুথের ভিতরেই লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে বচসা শুরু হয়। প্রতিবাদ করেন ওই ওয়ার্ডের সিপিআইএম প্রার্থী সিরিনা বিবি। অভিযোগ, এর পরেই ওই ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর শাহজাহান শেখ তাঁর দলবল নিয়ে প্রার্থীকে, তাঁর পরিবারের লোকজন এবং সিপিআইএম কর্মীদের মারধর করেন।
অভিযোগ বহিরাগতদের এনে বিশৃংখলা তৈরি করেছে তৃণমূল, তার প্রতিবাদ করার জন্যই এই হামলা। হুগলির রিষড়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সঞ্জয় পান্ডেকে ওয়েলিংটন জুটমিলের সামনে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বারাসতে একটি এবং সোনারপুরে চারটি ইভিএম ভাঙার খবরও পাওয়া গিয়েছে। সবগুলোই বিরোধীরা ভেঙেছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। ভাটপাড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রী গান্ধী বিদ্যাপীঠেও ইভিএম ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ, একজন ব্যক্তি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে ইভিএম আছাড় মেরে ভেঙে দেন। মদন মিত্রর কামারহাটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। কামারহাটিতে পুলিশ বেছে বেছে তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের মারধর করছে এবং ভোট নির্বিঘ্নে হতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিধায়ক মদন মিত্র। জঙ্গিপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জঙ্গিপুর ভিক্টোরিয়া প্রাথমিক স্কুলে ১৬০ নম্বর বুথেও ইভিএম ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে।
কমিশন সূত্রে খবর, ইভিএম নষ্ট করা হয়েছে এবং বিকল হওয়া ইভিএম-এর সংখ্যা ৬ টি। বোমার আঘাতে চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এক কনস্টেবল। ঘটনাটি ঘটেছে ধুলিয়ান পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডে। বোমের আঘাতে ওই পুলিশকর্মী চোখে গুরুতর চচোটপান। তাঁকে তড়িঘড়ি সামশেরগঞ্জ অনুপনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খড়গপুর খিদিরপুর প্রাইমারী স্কুলের সামনে ১০ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মৌসুমি দাসকে মারধর এবং শাড়ি টেনে ছিড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কাঁথিতে ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও ইভিএম ভাঙচুর হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরের ভারতী বিদ্যাপীঠে ৯ নং ওয়ার্ডের ৬৬ নং বুথে ভোটদান কেন্দ্রের মধ্যে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের দিকেই অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম প্রার্থী প্রভাস সিং। সেই সঙ্গে সঙ্গে জলের ড্রাম উল্টে দিয়ে চেয়ার, টেবিল ভেঙে দিয়ে, ইভিএম ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। দুটি বুথেই সাময়িক ভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পৌর ভোটকে কেন্দ্র করে বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নদিয়ার শান্তিপুর। বুথের সামনে পড়ে একাধিক বোমা। নদীয়ার শান্তিপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তন্তুবাই এলাকায় হঠাৎই বোমাবাজি শুরু হয়। খবর পেয়ে রানাঘাট এসডিপিও নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। রাজপুর সোনারপুর পুরসভার বিদ্যানিধি স্কুলে বুথে ঢুকে বাম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ। সোনারপুর পৌরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৮৯ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থী মহুয়া দাসের শাড়ি খুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। কাঁথিতে সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বুথে বুথে অবৈধ ভাবে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ তোলেন তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি।
কাঁথির ১৩নম্বর ওয়ার্ডে মন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে সৌম্যেন্দু আধিকারীর দেহরক্ষীদের সঙ্গে একপ্রস্ত বচসাও হয়। বুথে বুথে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে সৌমেন্দুর গাড়িও আটকায় পুলিশ। রবিবার ভোটকে ঘিরে উতপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটাপাড়াও। বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে এক তৃণমূল কর্মীকে চড় মারার অভিযোগ উঠছে। জয়নগর মজিলপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শান্তিপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেন অভিযোগ। অভিযোগের তির সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ধুলিয়ান পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৫১ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যেতেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটবৃষ্টি শুরু হয়। বোমা ছোড়ার অভিযোগও উঠে। ইটের আঘাতে জখম বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। ফরাক্কার এসডিপিও ওয়াসিম খানের গাড়ি লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। ভোটের খবর করতে গিয়ে কাঁথি দমদম সহ বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও।