খেলা-ধূলা
আজাজের ১০ উইকেট, ৬২ রানে অলআউট নিউজিল্যান্ড! ওয়াংখেড়েতে জয়ের গন্ধ ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আজাজ প্যাটেলের ‘দশে দশ’-এর ধাক্কা সামলে ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় দিনের শেষে চালকের আসনে টিম বিরাট কোহলি। ঘটনা বহুল দ্বিতীয় দিনের শেষে জয়ের গন্ধও ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে।
প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে এদিন ব্যাট করতে নেমে ৩২৫ রানেই শেষ হয়ে যায় ভারতের প্রথম ইনিংস। আগেরদিন অপরাজিত থাকা ঋদ্ধিমান সাহা (২৭) এবং তাঁর জাগায় নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (০) একই ওভারের পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দেন কিউয়ি স্পিনার আজাজ। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের খেলা শেষে ভারতের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২৮৫। আগের দিন শতরান করে অপরাজিত থাকা ময়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অক্ষর প্যাটেল। দু’জনে মিলে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেই দেড়শো রান করে আউট হন ময়াঙ্ক। ৩১১ বলে ১৭ বাউন্ডারি ও ৪ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১৫০ রান করেন ভারতীয় ওপেনার।
আজাজকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অফে ব্লান্ডেলের হাতে জমা পড়েন। তবে মায়াঙ্ক আউট হলেও অর্ধশতরান পূর্ণ করে দলকে ৩০০ এর গণ্ডি পার করে দেন অক্ষর। ১২৮ বলে ৫ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৫২ রান করেন তিনি। জয়ন্ত যাদব করেন ১২ রান। শেষে মহম্মদ সিরাজ (৪) রাচিন রবীন্দ্রর হাতে জমা পড়তেই জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলের পর বিশ্বের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করে ফেলেন আজাজ। ৪৭.৫ ওভারে ১২ মেডেন সহ ১১৯ রান দিয়ে ১০ উইকেট নেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই কিউয়ি স্পিনার। জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে চরম লজ্জার মুখে পড়ল নিউজিল্যান্ড। মাত্র ৬২ রানেই শেষ হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। ভারতের বিরুদ্ধে কোনও দলের টেস্টে এটাই সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। এর আগে ২০১৫ সালে নাগপুর টেস্টে ৭৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার অল আউট হয়ে যাওয়াটাই সর্বনিম্ন স্কোর ছিল।
টেস্টে নিউজিল্যান্ডের এটা ষষ্ঠ সর্বনিম্ন রান। টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানও তাদেরই। ১৯৫৫ সালে অকল্যান্ডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৬ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল কাউয়িরা। টেস্টে সর্বনিম্ন রানের তালিকায় নিউজিল্যান্ডের এদিনের ৬২ রান ৪৮ নম্বরে রয়েছে। শনিবার ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট পড়তে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের। পেসার মহম্মদ সিরাজ পর পর উইল ইয়ং (৪), অধিনায়ক টম লাথাম (১০), এবং রস টেলরের (১) উইকেট তুলে নিয়ে কিউয়িদের চাপে ফেলে দেন। এরপর আজাজের দেখানো পথেই শুরু হয় ভারতীয় স্পিনারদের পাল্টা আক্রমণ। অশ্বিন, অক্ষর, জয়ন্ত যাদবদের ভেল্কিতে সাজঘরে ফেরার শোভাযাত্রায় মেতে ওঠেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রান করেন কেইল জেমিসন। মাত্র ২৮.১ ওভার স্থায়ী হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস।
অশ্বিন ৮ ওভারে ৮ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন। এছাড়াও সিরাজ তিনটি, অক্ষর দু’টি এবং জয়ন্ত ১ উইকেট পেয়েছেন। ৬২ রানে অলআউট করে নিউজিল্যান্ডকে ফলো-অন করানোর সুযোগ পেলেও সেই পথে হাঁটেননি বিরাট কোহলি। ২৬৩ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। কেন নিউজিল্যান্ডকে বাগে পেয়েও ফলো-অন করালো না ভারত, তা নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে। ওয়াংখেড়ের উইকেটের যা অবস্থা, তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ২৬৩ রান তোলা সম্ভব হতো বলে মনে হয় না। অথচ সেই সাহস দেখাতে পারলেন না বিরাট কোহলিরা। তাহলে কি আত্মবিশ্বাসের অভাব! প্রশ্ন উঠছে।
আবার অনেকের মতে, উইকেটের অবস্থা দেখেই চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইলেন না বিরাটরা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে বিনা উইকেটে ৬৯ রান তুলেছে ভারত। ফিল্ডিং করার সময় কোনুইয়ে চোট পাওয়ায় মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে ছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও পর্যন্ত সেই ভাবে সুবিধে করে উঠতে পারেননি আজাজ। মায়াঙ্ক ৩৮ ও পূজারা ২৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত ৩৩২ রানে এগিয়ে। রবিবার তথা তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ডের সামনে ভারত কত বড় টার্গেট রাখে সেটাই এখন দেখার। তবে ম্যাচের যা গতি প্রকৃতি তাতে, ভারতের জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বললে ভুল কিছু বলা হবে না।