খেলা-ধূলা
দু’বছর পর মোহনবাগান দিবসে আবারও উৎসব ফিরল বাগানে, জেলায় জেলায় সেলিব্রেশন
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সালটা ছিল ১৯১১। তার মাত্র ৬ বছর আগে বঙ্গভঙ্গ করেছেন লর্ড কার্জন। প্রতিবাদে উত্তাল গোটা বাংলার লেখক, সাহিত্যিক চিত্রকর, নাট্যকার, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুব-সহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ৷ বাদ যাননি খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াপ্রেমী মানুষও। এর মাঝেই প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে ব্রিটিশ দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতে নেয় মোহনবাগান। বুট পরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে খেলা বাঙালি ছেলেদের অমিতবিক্রম লড়াই ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাস। শিবদাস ভাদুড়ির নেতৃত্বে সবুজ মেরুণের সেই সাফল্য প্রভাবিত করেছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকেই। তখন থেকেই এই দিনটিকে ‘মোহনবাগান দিবস’ হিসাবে উদযাপন করা হয়।
আজ সেই ২৯ জুলাই।ভারতীয়দের স্পর্ধা দেখানোর দিন। খালি পায়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্রিটিশকে বাংলার মাটিতেই জব্দ করার দিন। ভারতের বুকে ইউনিয়ন জ্যাক অবনমিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার দিন।
শিবদাস, বিজয়দাস, ভূতি সুকুল, রেভারেন্ড সুধীর, রাজেন সেনগুপ্তদের সবুজ মেরুন জার্সি বুকে নিয়ে মোহনবাগান সত্ত্বা ফিরে পাওয়ার দিন।
গত দু’বছর করোনার কারণে সেই ভাবে কোনও অনুষ্ঠান না হলেও এবছর জাঁকজমক করেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মোহনবাগান দিবস। গঙ্গা পারের এই শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। সমর্থকদের ভিড়। সকাল থেকেই মোহনবাগান দিবস উপলক্ষে ক্লাবের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে একাধিক কর্মসূচি। হয়েছে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের নিয়ে ফুটবল ম্যাচ। বিকালেও একাধিক সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এবারের ‘মোহনবাগান রত্ন’ সম্মান প্রদান করা হচ্ছে বাংলা তথা দেশের অন্যতম প্রখ্যাত খেলোয়াড় শ্যাম থাপাকে। কোভিডেরের আতঙ্ক কাটিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই আবারও চেনা ছন্দে কলকাতার ময়দান।
শুধু ক্লাব তাঁবুতেই নয়, জেলায় জেলায় মোহনবাগান দিবস উদযাপন করছেন সবুজ মেরুন সমর্থকরা। নদিয়ার শান্তিপুরে সবুজ মেরুন ফ্যান ক্লাব ‘মেরিনার্স’ এর সদস্যরা শুক্রবার ক্লাবের পতাকা, ফেস্টুন হাতে নিয়ে মাতলো খুশিতে। মোহনবাগান দিবস উপলক্ষে আগামী রবিবার গরীব, অসহায় মানুষদের খাদ্য সামগ্রী প্রদান সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিও নিয়েছেন তাঁরা।
তবে এই মোহনবাগান দিবসেও তাঁদের একটাই দাবি, এটিকে-এর সঙ্গে বিচ্ছেদ করে একলা চলুক তাঁদের প্রাণের থেকেও প্রিয় মোহনবাগান। তাঁদের দাবি, ‘১১১ বছর আগে ইংরেজদের হারানো মোহনবাগানের নামের সঙ্গে এক ফ্র্যাঞ্চাইজির অস্তিত্ব সবার অপমান। যা মেনে নেওয়ার অর্থ নিজের শিরদাঁড়াই বিকিয়ে ফেলা। ভারতীয় ফুটবলে সর্বকালের সেরা রেকর্ড, বিশ্বজোড়া সমর্থক, আবহমান ঐতিহ্যর সাহায্যে ফিরে আসুক সবুজ-মেরুন স্পর্ধা ফিরে আসুক প্রাণের অধিক ভালোবাসার ১৩৩ বছরের পালতোলা নৌকায়।’