খেলা-ধূলা
চোট সারিয়ে ফিরেই ছন্দে রোহিত, চাহালের ভেল্কিতে ঐতিহাসিক হাজারতম ম্যাচে জয় ভারতের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম বড় ভক্ত। সেই কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু দিনেই আহমেদাবাদে ঐতিহাসিক এক হাজারতম ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেল ভারত। তিনি সুস্থ ও জীবিত থাকলে নিশ্চয়ই এই ঐতিহাসিক জয়ের জন্য রোহিত শর্মাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে শুভেচ্ছা জানাতেন।
রবিবার লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে যখন গোটা দেশ ও পৃথিবী শোকস্তব্ধ, তখন আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারত। আর রোহিত শর্মা দলে ফিরতেই জয়ের ট্র্যাকে ফিরল ভারত। হ্যামস্ট্রিঙের চোটের কারণে রোহিত না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে হেরে ফিরতে হয়েছিল ভারতকে। কিন্তু রোহিত ফিরতেই আবার উজ্জ্বল ভারতীয় দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ভারত। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত। তাঁর সেই সিদ্ধান্ত খুব একটা ভুল ছিল না। যুজবেন্দ্র চাহাল, ওয়াশিংটন সুন্দরের ভেলকিতে ৪৩.৫ ওভারে মাত্র ১৭৬ রানেই শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। সদ্য ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা রবিবার ভারতীয় স্পিনারদের সামনে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই ক্যারিবিয়ান ওপেনার শাই হোপকে (৮) ফিরিয়ে দেন মহম্মদ শিরাজ। এরপরই শুরু হয় সুন্দর-চাহাল জুটির আঙ্গুলের ভেলকি। ব্রেন্ডন কিং (১৩), ড্যারেন ব্রাভো (১৮) সুন্দরের শিকার হয়ে ফিরে যান। এরপর সামার ব্রুকস (১২), নিকোলাস পুরন (১৮), অধিনায়ক কায়রন পোলার্ডকে (০) ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং ধ্বস নামান চাহাল। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ফেরান আকেয়াল হোসেইনকে (০)। ৭৯ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের। একটা সময় মনে হচ্ছিল একশোর গণ্ডীও টপকাবে না। সেখান থেকে ৭৮ রানের পার্টনারশিপ করে দলের লজ্জা কিছুটা বাঁচান জেসন হোল্ডার ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। ৭১ বলে ৪ ওভার বাউন্ডারি সাহায্যে ৫৭ রান করেন হোল্ডার। অ্যালেনকে (২৯) ফিরিয়ে ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিকে ভাঙ্গেন সেই সুন্দর। জুটি ভাঙ্গার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হোল্ডার। তাঁকে ফেরান কৃষ্ণ। এরপর আলজারি জোসেফকে (১৩) চাহাল ফিরিয়ে দিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ১৭৬ রানে শেষ হয়ে যায়। ম্যাচের সেরা চাহাল চারটি, সুন্দর তিনটি, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ দু’টি এবং একটি উইকেট নিয়েছেন সিরাজ।
ভারতের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। কে এল রাহুল এবং শিখর ধাওয়ান না থাকায় ঈশান কিষানকে নিয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন অধিনায়ক রোহিত। শুরু থেকেই ছন্দে ছিলেন রোহিত। ঈশান কিষাণের সঙ্গে ওপেনিংটা বেশ ভালো করেছিলেন রোহিত। ক্রিজের এক প্রান্তে ধীরেসুস্থে খেলছিলেন ঈশান। অধিনায়ক দায়িত্ব নিয়েছিলেন দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ওপেনিং পার্টনারশিপে ৮৪ রান ওঠে। অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেলেন রোহিত। কিন্তু আলজারির শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। হিট-ম্যানের ৫১ বলে ৬০ রানের ইনিংসটি সাজান ছিল ১০ বাউন্ডারি এবং এক ওভার বাউন্ডারি দিয়ে। তিন নম্বরে মাঠে নামেন বিরাট কোহলি। রোহিতের অধিনায়কত্বে এই প্রথম খেললেন কোহলি। মনে করা হচ্ছিল বড় রান আসবে তাঁর ব্যাটে। কিন্তু মাত্র ৪ বলে ৮ রান করে আলজারির ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে উইকেট দিয়ে বসেন কোহলি (৮)। রোহিত-বিরাট ফেরার পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি ঈশান। ২৮ রান করে হোসেইনের বলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর ঋষভ পন্থ ১১ রানের মাথায় দুর্ভাগ্যবশত রান আউট হয়ে ফিরে যান। এরপর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সূর্যকুমার যাদব এবং অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা দীপক হুডা। এই জুটির সৌজন্যে মাত্র ২৮ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। সূর্য ৩৪ এবং ঐতিহাসিক ম্যাচে অভিষেক হওয়া দীপক ২৬ রান করে অপরাজিত থেকে যান।