বিনোদন
লোকসংগীতের পর এবার সাঁওতালি, সোশ্যালে ভাইরাল চাঁদমনি
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আজ একুশে জুন বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। সমস্ত সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের কাছে এই দিনটির বিশেষভাবে মাহাত্ম্য রয়েছে। এই বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে আপনাদের পরিচয় করাই এক অজানা সংগীতশিল্পী সঙ্গে। যার গান সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন বেশ ভাইরাল। সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রোল করতে গিয়ে আমাদের অনেকেরই চোখে পড়েছে একটি আদিবাসী মেয়ের লোকসংগীত গান। গানটি হল ‘কালো জলে কুচলা তলে ডুবল সনাতন’। যে মেয়েটি এই গান গেয়েছে তার জীবন সংগ্রামের গল্প শুনলে হয়তো আপনার মনকেও একটু হলে নাড়া দিয়ে যাবে। এই মেয়েটির নাম চাঁদমনি হেমরম। আদিবাসী লোকসংগীত শিল্পী চাঁদমনির বয়স ১৬। হুগলির খণ্যান এর বড় বুল্টি গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় তার বাড়ি। বাবা মারা গিয়েছেন অনেক অল্প বয়সে। মা ও দুই বোনের সঙ্গে তাদের সংসার। বাড়িতে আর্থিক উপার্জনের দায়ভার পুরোটাই তাদের মায়ের উপরে। বাকি দুই বোনের মধ্যে বয়সে বড় চাঁদমনি।
স্বভাবতই মায়ের পর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে তারই উপরে। মা মাঠে চাষের কাজ করেন এবং অবসর সময়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে ক্যাটারিং এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। চাঁদমনি অল্প বয়স থেকেই মায়ের সঙ্গে চাষের কাজে হাত লাগায়। বর্তমানে আদিবাসী লোকসংগীত শিল্পী ক্লাস ইলেভেনের কলা বিভাগের ছাত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার গান ভাইরাল হওয়ার পর পাড়া প্রতিবেশীদের ও নেটিজেনদের মধ্যে তার নাম ছড়িয়ে পড়লেও সুরাহা হয়নি তার সংসারের।
ছোটবেলা থেকেই কখনও গান শেখেনি কারো কাছে। পুরোটাই রপ্ত হয়েছে তার গান শুনে শুনে। ইদানিংকালে তার গান ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তার গৃহ শিক্ষিকার কাছে গানের তালিম নিচ্ছে সে। সে জানায় তার ইচ্ছা রয়েছে বড় হয়ে একজন লোকসংগীত শিল্পী হয়ে ওঠার। বাংলা গানের পাশাপাশি নিজেদের সাঁওতালি ভাষাতেও গান বেধেছে চাঁদমনি। কিন্তু তার দুশ্চিন্তা মায়ের পক্ষে একা তাদের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে উঠছে প্রতিদিন। এমন সময় কিভাবে সে তার গানের অভ্যাস চালিয়ে যাবে! সে শুনেছে সরকার থেকে লোকসংগীত শিল্পীদের জন্য বেশকিছু সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে। তার দাবি যদি সে সে রকম কিছু সাহায্য পায় তাহলে হয়ত একটু হলেও সুরাহ মিলবে।
চাঁদমনির শিক্ষক দীলিপ বাবু জানান, চাঁদমনি তাদের সমস্ত আদিবাসী মানুষের গর্ব। তার গানের গলায় রয়েছে অদ্ভুত এক জাদু। কিন্তু তাদের পরিবারের পক্ষে চাঁদমনির গানের খরচা চালানো একেবারেই সম্ভব নয়। দিলীপবাবু আরো বলেন, তার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে চাঁদমনির গানের অভ্যাসের জন্য যাবতীয় দায়ভার নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী আগামী দিনে চাঁদমনি একজন নামজাদা লোকসংগীতশিল্পী হয়ে উঠবে।