খেলা-ধূলা
যুবভারতীতে ‘লঙ্কাকাণ্ড’! বাগানের ফাইভ ‘স্টারে’ বেসামাল ব্লু স্টার

এটিকে মোহনবাগান- ৫ ব্লু স্টার- ০
(কাউকো-২, মনবীর-২, উইলিয়ামস)
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। মঙ্গলবার যুবভারতী সেই দৃশ্যরই সাক্ষী থাকল। এএফসি কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের অভিযান ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টার দলকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে দুর্দান্ত শুরু করল এটিকে মোহনবাগান। চরম অর্থনৈতিক সংকটে নাজেহাল অবস্থা শ্রীলংকার। তার প্রভাব মঙ্গলবার যুবভারতীতে হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারল না শ্রীলংকার দলটি। ম্যাচের প্রথম পাঁচ-দশ মিনিট একটু ভালো খেললেও বাকি সময়টায় খুঁজেই পাওয়া গেল না ব্লু স্টারকে। উল্টোদিকে এটিকের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের পর এই প্রথম প্রায় দু’বছর পর ঘরের মাঠে, সমর্থকদের উপস্থিতিতে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে বাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো বলেছিলেন, ‘আইএসএল এর সেমিফাইনালে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। তার প্রভাব এই ম্যাচে পড়বে না। অতীত ভুলে সামনে তাকাতে চাই। আশাকরি দলের খেলায় সকলকে খুশি হবে।’
কোচের এই কথার মর্যাদা রেখেছেন ফুটবলাররা। আগাগোড়া দাপট দেখিয়ে শ্রীলংকার দলকে হারিয়ে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়লেন কাউকো, মনবীররা। অর্থনৈতিক সংকটের নাজেহাল শ্রীলংকার দলটিকে এদিন রীতিমতো দুরমুশ করল এটিকে মোহনবাগান। তাও আবার অর্ধেক শক্তির দল নিয়ে। গোলমেশিন রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসো, ডিফেন্সের ভরসা সন্দেশ ঝিঙ্গান আমরিন্দরদের ছাড়াই এদিন মাঠে নেমেছিল বাগান। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট একটু অগোছালো লাগলেও সময় যত গড়াল ততই ছন্দে ফিরল এটিকে মোহনবাগান। যুবভারতীর সবুজ ঘাসে মেরুন ফুল ফোটালেন কাউকো, মনবীর, ডেভিড উইলিয়ামসরা। গোলের জন্য যদিও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাগানকে। প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে যায় সবুজ মেরুন শিবির। জোড়া গোল করলেন কাউকো। তৃতীয় গোলটি মনবীরের। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দু’টি গোল করলেন ডেভিড উইলিয়ামস এবং মনবীর।
আরও পড়ুন: জীবনকে উপভোগ করার দর্শন শেখালেন সৌরভ, ভবিষ্যতে কি তাঁকে ভারতের কোচ হিসেবে দেখা যাবে? কী বললেন দাদা?
বহুদিন পর মাঠে বসে প্রিয় দলের খেলা এবং জয় উপভোগ করলেন বাগান সমর্থকরা। মঙ্গলবার যুবভারতীর গ্যালারিতে ভিড় জমিয়েছিলেন ২৪ হাজার ৭৭৩ জন সমর্থক। যুবভারতীতে ফিরল সেই চেনা গর্জন। বাগানের মুহুর্মুহু আক্রমণ ব্লু স্টারের বক্সে আছড়ে পড়তেই গর্জে উঠেছিল গ্যালারি। সেইসঙ্গে ‘রিমুভ এটিকে’ এর আওয়াজও সমানভাবে ছিল। ‘উই হ্যাভ টু সেভ আওয়ার আইডেন্টিটি’, ‘উই আর সাপোর্টারস, নট ইয়র কাস্টমারস’, ‘উল্ট্রাস নেভার কুইট’ লেখা টিফো, ব্যানারও চোখে পড়ল গ্যালারিতে। কিন্তু দলের বড় ব্যবধানে জয়ে ঢাকা পড়ে গেল সেই দাবি। ম্যাচ শেষে হাসিমুখেই মাঠ ছাড়লেন ‘প্রতিবাদী’ সমর্থকরাও।
দলের প্রথম সারির একাধিক ফুটবলার না থাকায় মঙ্গলবার ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ফেরান্দো। অমরিন্দর না থাকায় তাঁর জায়গায় দুর্গ রক্ষার ভার কোচ তুলে দিয়েছিলেন তরুণ গোলরক্ষক আরশের হাতে। হতাশ করেননি তিনি। একটু পেছন থেকে খেললেন হুগো বৌমাস। লিস্টনের বদলে বাঁ দিকে শুরু করেন বাগানের রাইজিং স্টার কিয়ান নাসিরি। মঙ্গলবার কিয়ানের গতির কাছে বারবার পরাস্ত হচ্ছিল শ্রীলংকার দলটি। দুই উইং দিয়ে মনবীর, কিয়ানের দৌড় নাজেহাল করে দিয়েছিল স্টার ডিফেন্সকে। ২৪ মিনিটে হুগোর থেকে বল পেয়ে কাউকোকে বাড়ান মনবীর। ডান পায়ের শটে বল জালে রাখতে কোনও ভুল করেননি ইউরো খেলা ফুটবলারটি। তার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই একক দক্ষতায় গোল করে ব্যবধান বাড়ান মনবীর। ম্যাচের বয়স তখন ২৯। ৩৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোলটি করেন সেই কাউকোই। বক্সের মধ্যে ব্লু স্টারের ফুটবলার প্রিন্সের হাতে বল লাগায় পেনাল্টি দিতে কোনও ভুল করেননি রেফারি। স্পটকিক থেকে ৩-০ করেন কাউকো।
আরও পড়ুন: কাতার বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল
প্রথমার্ধে মোহনবাগান যে খেলাটা খেলেছিল তাতে বিরতিতে মনে হয়েছিল কম করে হাফ ডজন গোল হবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎই ছন্দপতন। দু’টো গোল এলেও বাগানের খেলায় সেই ছন্দ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫৮ মিনিটে প্রবীরের জায়গায় বিদ্যানন্দ, শুভাশিসের জায়গায় সুমিত রাঠি, ৬৭ মিনিটে কাউকোর জায়গায় আশুতোষ মেহতা ও কিয়ানের জায়গায় রবি বাহাদুর রানাকে নামিয়েছিলেন ফেরান্দো। ৭৭ মিনিটে চতুর্থ গোলটি করেন ডেভিড উইলিয়ামস। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে ব্লু স্টারের কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতেন মনবীর সিং। এদিনের এই জয় সমর্থকদের উৎসর্গ করেছেন কাউকো।
এটিকে মোহনবাগানের পরবর্তী ম্যাচ ১৯ তারিখ বাংলাদেশের আবহনীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের দলটিকে যথেষ্ট সমীহ করছেন ফেরান্দো। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে বলতে গিয়ে বাগান কোচ বলেছেন, ‘শুনেছি দলটা খুবই ভালো। ওদের ডিফেন্স ভালো। সঙ্ঘবদ্ধ ও শক্তিশালী দল। তাই ম্যাচটা খুব একটা সহজ হবে না।’ সেই ম্যাচে রয় কৃষ্ণকে পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে ফেরান্দো বলেছেন, ‘ওর একটা ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে। সেই জন্য খেলতে পারেনি। তবে দলের ২৮ জন ফুটবলারের ওপরেই বিশ্বাস আছে। যাদের পাওয়া যাবে তাদেরকে নিয়েই ভালো খেলা উপহার দিতে চাই।’
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে নয়া নজির গড়লেন ভারতের অভিজ্ঞ পেসার ঝুলন গোস্বামী, জিতল ভারত
মঙ্গলবারের ম্যাচে একাধিক ফুটবলারকে পাওয়া না গেলেও দলছর পারফরমেন্স এবং ফলাফলে খুশি বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বাগান কোচ। উল্টোদিকে, ব্লু স্টার কোচ বান্দা সামারাও স্বীকার করে নিয়েছেন, যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে এটিকে মোহনবাগান। পাশাপাশি প্রথমার্ধেই তাদের যা বিপর্যয় হওয়ার হয়ে গিয়েছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। এই জয়ের জন্য বিপক্ষ দলকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।