বাংলা ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় দেশের শিল্পপতিরা, ১০ হাজার কোটি বিনিয়োগ করছে আদানি গোষ্ঠী

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : বুধবার থেকে নিউটাউনে বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয়েছে ষষ্ঠতম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। ৪২ দেশের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি এবং শিল্পপতি অংশ নিয়েছেন এবারের এই বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে। বুধবার সম্মেলন মঞ্চ থেকেই বাংলা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় মুখর হলেন দেশের শিল্পপতিরা। কে ছিলেন না সেই তালিকায়! গৌতম আদানি, আজিম প্রেমজি, নিরঞ্জন হিরানন্দানি, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জয় জিন্দাল, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় পুরী, সঞ্জীব মেহতা। সকলেই অকপটে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। শিল্পপতি নিরঞ্জন হিরানান্দানি বলেছেন, ‘গোটা বিশ্ব যখন মন্দায় আক্রান্ত তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলা ৭.২ শতাংশ সার্বিক বৃদ্ধির ম্যাজিক দেখিয়েছেন। ১০ বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গে আসতে দ্বিধা হতো। এখন পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ।’ তিনি রাজ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন – আট স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রাজ্যের উন্নয়ন, শিল্পপতিদের বিনিয়োগে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

তবে রাজ্য এবং মুখ্যমন্ত্রীর সবথেকে বেশি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। তিনি বলেছেন, ‘কলকাতায় এসে গর্ববোধ করছি। কলকাতা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। গোপালকৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, তা ভারত কাল ভাবে। সত্যি কথা। বাংলা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। বাংলার নারীশক্তি বরাবরই সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। বাংলা বরাবরই নারী ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছে। গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী, পথ সাথী, সবুজসাথীর মতো বাংলার প্রকল্প।’ এরপরই তিনি রাজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেন। এবং এই বিনিয়োগের ফলে রাজ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন। রাজ্যে একটি ডেটা সেন্টার, ওয়্যারহাউজ, লজিস্টিক পার্ক তৈরি, সমুদ্রের নীচে কেবল পাতার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও আসংস্থার অধীন আদানি উইলমার গ্রুপের ফরচুন সরষের তেলের উৎপাদন বাড়াতে চান বলেও জানিয়েছেন গৌতম আদানি। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন গৌতম আদানি।

আরও পড়ুন –  আন্তর্জাতিক ট্রাক পরিবহনের করকাঠামোর সরলীকরণ, নয়াচর-সিলিকন ভ্যালি নিয়ে বড়

কিছুদিন আগেই নবান্নে এসে এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গৌতম আদানি বলেছেন, ‘আমি বাংলা থেকে সব সময় উৎসাহিত হই। এই বাংলার মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের মহান সন্তানরা। রামকৃষ্ণদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই নামের তালিকা শেষ হবে না। অন্য কোনও রাজ্য এত মহাপুরুষের জন্ম দেয়নি। মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ক্ষেত্রেও সবথেকে এগিয়ে বাংলা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সরোজিনী নাইডু, মাতঙ্গিনী হাজরা, সুহাসিনী গাঙ্গুলীর মতো মহান মহিলারা নিজেদের পথ নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছিলেন। বাংলায় দেবীর আরাধনা হয়। গোটা দেশে একজনই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন যিনি বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলার মহান মহিলাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় দিদি। মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্প ইউনাইটেড নেশনসে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। দক্ষতার মানোন্নয়নে উৎকর্ষ বাংলা। সবুজ সাথী প্রকল্প পুরস্কৃত হয়েছে। আপনার জনপ্রিয়তা কারও সঙ্গে তুলনা হয়না। আপনার ভরসা এবং বিশ্বাসের জোরে এগিয়ে চলেছে বাংলা। আপনি সমস্ত ক্ষেত্রে শিল্পীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাই বিনিয়োগের জন্য আদানি গোষ্ঠীর ফোকাস এখন বাংলায়। আমরা বাংলার পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করব।’ রাজ্যের অপর শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেছেন, ‘১১ বছর আগে অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্ধকার ছিল। আমরা তখন ভেবেছিলাম অন্যত্র সরে যাব। বাংলায় এখন পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। উনি এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায়। এখন আর বনধের সংস্কৃতি নেই। কর্ম দিবস নষ্ট হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজ্যে কাজের সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগের এখন সবথেকে বড় জায়গা। তাই আমরা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ধারা বজায় রাখতে চাই।’

আরও পড়ুন –  জেলার সংখ্যা বাড়াতে আরও আইএএস, আইপিএস চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিচ্ছেন মমতা